পাবনায় ঋণ গ্রহিতার এসিড পানে আত্মহত্যার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : পাবনায় এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে ঋণ আদায়ে মানুষিক অত্যাচার ও গালিগালাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এক নারী ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এনজিওর কর্মচারীরা অপমান ও গালাগালিকরে। সেই অপমান সইতে না পেরে সে এসিড পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তার নাম রোজীনা খাতুন।
গত ছয়দিন ধরে এই নারী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। কন্ঠনালী পুড়ে ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় কথা বলতে পারছেন না তিনি। তার বাড়ি পাবনা জেলা সদরের আরিফপুর মহল্লায়। তিনি ট্রাকাচলক আমজাদ হোসেন এর স্ত্রী।
গত ১১ জানুয়ারী এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ১৫ জানুয়ারী দায়েরকৃত মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় ওই নারীর ছেলে হৃদয় হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় পাঁচজনকে আসামী করা হয়েছে। তার মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ‘প্রতিশ্রুতি পাবনা’ এনজিওর দোগাছি শাখা ব্যবস্থাপক সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাশুরিয়া গ্রামের মৃত আহছান উল্লাহর ছেলে এহিয়া খান (৩৮) ও একই শাখার মাঠকর্মী পাবনা পৌর সদরের দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লার মৃত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী শাহিদা খাতুন (৩৫)।
মামলার এজাহার ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় মাস আগে রোজীনা খাতুন ‘প্রতিশ্রুতি পাবনা’ নামের একটি এনজিওর পাবনা সদরের দোগাছি কার্যালয় থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নেন।
এরপর তিনি সাপ্তাহিক ১৩০০ টাকা হারে ঋণের ২৩ কিস্তি ২৯ হাজার ৯০০ টাকা পরিশোধ করেন। সাংসারিক অভাব-অনটনে এরপর আর কিস্তির টাকা দিতে পারেননি। ফলে বেশ কিছুদিন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ছিলেন।
গত বুধবার (১১ জানুয়ারী) সকালে রোজিনা বাড়িতে ফেরার পর মাঠকর্মী শাহিদা খাতুন লোকজন নিয়ে তাঁর বাড়িতে আসেন।
এ সময় রোজীনা খাতুন ঋণ পরিশোধ না করতে পারায় ক্ষমা চেয়ে ঋণের কিস্তির টাকা ১৩০০ এর স্থলে কিছুটা কমিয়ে দিতে অনুরোধ জানান। এতে মাঠকর্মী শাহিদা খাতুন রাজি না হয়ে রোজীনা খাতুনকে তাদের কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যান।
সেখানে গিয়ে রোজীনা খাতুন কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক এহিয়া খানের কাছেও ঋণের কিস্তি কমিয়ে দেবার অনুরোধ জানান।
কিন্তু ব্যবস্থাপক তার অনুরোধ না শুনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বিষয়টি আত্মসম্মানে আঘাত করায় রোজীনা খাতুন বাড়িতে ফিরে ওইদিন এসিড পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোজীনা খাতুনের ছেলে হৃদয় হোসেন বলেন, ভর্তির পর এখন পর্যন্ত তাঁর মায়ের অবস্থার উন্নতি নেই।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর মায়ের অবস্থা ভাল নয়। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার (১৮ জানুয়ারী) তার মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করবেন বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, খবর পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে।
ঘটনার পর ১২ জানুয়ারী ওই দুইজনকে গ্রেপ্তার করে ৫৪ ধারায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তারা পলাতক রয়েছে।
অভিযোগটি পুরোপুরি সত্য নয় দাবি করে প্রতিশ্রুতি পাবনার নির্বাহী পরিচালক মমতা চাকলাদার বলেন, ওই নারী ঋণ নিয়েছিলেন, তার টাকা পরিশোধ করেননি। তিনি কিছুদিন পলাতকও ছিলেন।
পরে বাড়িতে ফেরার পর তার কাছে টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু তাকে আটক বা অপমান লাঞ্চনার কিছু ঘটেনি। মূলত ওনার স্বামীর সাথে তার পারিবারিক সমস্যার কারণে এসিড পানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, তারপরও আমরা ওই নারীর চিকিৎসায় যতটুকু সম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করছি। তিনি চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে ফেরার পর তাকে নিয়ে একটা সংবাদ সম্মেলন করে পুরো ঘটনা ও বিষয়গুলো পরিষ্কার করা হবে বলে জানান মমতা চাকলাদার।