বাংলায় ভাষাসেতুর স্বপ্ন পাকিস্তানি যুবকের

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : পাঞ্জাবি তাঁর মাতৃভাষা, জাতীয় ভাষা উর্দু। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত গুজরানওয়ালার যুবক মোহাম্মদ তাহির ওয়াহিদ করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে পাশ করেছেন গত বছর।
তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলা নিয়ে আরও পড়াশোনা করার। পাকিস্তানে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর।
তাহিরের বাড়ির অন্য কেউ বাংলা জানেন না। তাই বাড়িতে বাংলা ভাষা চর্চার প্রশ্নই ওঠে না। তবু বাংলা নিয়ে পড়তে চেয়ে, বাংলার টানে তাহির গুজরানওয়ালা থেকে সোজা চলে গিয়েছিলেন সিন্ধ প্রদেশের রাজধানী করাচিতে।
অবিভক্ত ভারতবর্ষে করাচি, লাহোরের চিকিৎসক-আইনজীবীদের অধিকাংশই ছিলেন বাঙালি; কিন্তু সেই দিন অতীত।
রোববার করাচি থেকে ফোনে পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজারকে ঝরঝরে বাংলায় তাহির বললেন, ‘স্কুলে ইতিহাস বইয়ে পড়েছিলাম বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অতীতের যোগাযোগের কথা।
সেই থেকে ইচ্ছে ছিল বাংলা ভাষা শিখব।’ করাচি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ সালে চালু হয়। প্রথমেই তৈরি হয় বাংলা বিভাগ।
১৯৭১ সালের যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে পাকিস্তানে বাংলা চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গেলেও করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ এখনও টিকে আছে। প্রতি বছর চার-পাঁচ জন শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি হন, বিভাগে শিক্ষক আছেন দু’জন।
তাহিরের পিতা অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক আব্দুল ওয়াহিদ ছেলের বাংলা শেখার ইচ্ছেয় সায় দেননি। তার ছয় সন্তানের মধ্যে তাহির ছাড়া অন্য কেউ আগে কখনও বাংলা ভাষা শিখতে আগ্রহও দেখাননি।
বাবা তাহিরকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন—যদি বাংলা নিয়ে পড়তেই হয়, তা হলে তিনি যেন নিজে অর্থ জোগাড় করে পড়েন। পরিবার থেকে কোনও সাহায্য মিলবে না। ‘
‘তার পরে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। টিউশন করে নিজের পড়াশোনা চালিয়েছি,’ টেলিফোনে বলেন তাহির।
করাচিতে পৌঁছে তাহির দেখলেন—সেখানে বাঙালি অনেক; এই বাঙালিদের প্রায় সবাই তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকা থেকে করাচিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র হয়ে যাওয়ার পর আর দেশে ফেরেননি।
তাহিরের কথায়, ‘বাঙালি অধিবাসীরা দাবি করেন, পাকিস্তানে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। এত বাংলাভাষী থাকলেও পাকিস্তানে বাংলার চর্চা নেই বললেই চলে। স্কুলে এখানে কোথাও বাংলা পড়ানো হয় না।’
তাহির যে-হেতু আগে বাংলা পড়েননি, তাই একেবারে অ, আ, ক, খ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শুরু করেছিলেন।
সেমিস্টার এগিয়েছে, সেই সঙ্গে তাহিরের পাঠ্যক্রমে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। তাদের বিভাগে হুমায়ূন আহমেদের নাটকও দেখানো হতো।।
তাহির জানালেন, করাচিতে আছে নজরুল ইসলাম অ্যাকাডেমি। সেখানে রয়েছে অজস্র বাংলা বই; কিন্তু পড়ার লোক তেমন কেউ নেই। সেখানে গিয়ে প্রাণভরে বাংলা বই পড়েছেন তাহির।
এখন ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ তৈরি করে পাকিস্তানে যারা ইচ্ছুক, তাঁদের বাংলা শেখাতে উদ্যোগী হয়েছেন তাহির। বাংলা সাহিত্য উর্দুতে তর্জমারও চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
আনন্দবাজারকে তাহির জানান, তিনি যেতে চান বাংলাদেশে। সেই সঙ্গে শান্তিনিকেতন ও নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়া দর্শন করতে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ারও খুব ইচ্ছে আছে তার।
‘যদি বাংলাদেশ অথবা ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বাংলা পড়ার সুযোগ পাই, বড় ভাল হয়,’ স্বপ্নালু শোনাল তাহিরের কণ্ঠস্বর।