সাংবাদিকের মামলায় যুবদল নেতাকে মুক্তিযুদ্ধের ১২টি বই পড়ার আদেশ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৩; সময়: ১২:০৫ am | 
খবর > আইন-আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : একজন সাংবাদিকের দায়ের করা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজগর তালুকদার হেনা ও শহর যুবদলের আহ্বায়ক আদিল শাহরিয়ার গোর্কী। তবে আদালত তাঁদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য সাতটি শর্তে প্রবেশন দিয়েছেন।

রবিবার দুপুরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এ আদেশ দিয়েছেন। সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রবেশনের সাত শর্তের মধ্যে তৃতীয় শর্ত হলো, দুই আসামিকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা ১২টি বই পড়তে হবে। কী কী বই পড়তে হবে সেটিও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন আদালত।

বইগুলো হলো- একাত্তরের দিনগুলি (জাহানারা ইমাম), একাত্তরে চিঠি (রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা), মা (আনিসুল হক), মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল (ড. কামাল হোসেন), আমার মুক্তিযুদ্ধ (আনিসুজ্জামান), উষার দুয়ারে (আনিসুল হক), দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ (রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী), আমি বিজয় দেখেছি (এম আর আক্তার মুকুল), চরমপত্র (এম আর আক্তার মুকুল), আমি বীরাঙ্গনা বলছি (নীলিমা ইব্রাহিম), হাঙর নদী গ্রেনেড (সেলিনা হোসেন) এবং রাইফেল রোটি আওরাত (আনোয়ার পাশা)।

প্রথম শর্ত হলো- দুই আসামিকেই মামলার বাদী তানভীর আলম রিমনের কাছে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো- আসামিদের ১০টি ফলজ ও ১০টি বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করতে হবে। অন্য শর্তগুলোর মধ্যে আছে, আসামিদের নিজ নিজ আইডি থেকে সাইবার সচেতনতা বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, প্রবেশনকালীন সময় দোষী সাব্যস্ত আসামিরা কোনোরূপ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ করবেন না; আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই আসামি এক লাখ করে দুই লাখ টাকা আদালতে জমা দেবেন। এর এক লাখ পাবেন বাদী এবং এক লাখ পাবে রাষ্ট্র।

আইনজীবী ইসমত আরা জানান, আসামিরা প্রবেশনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী প্রত্যেকে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করবেন। পাশাপাশি তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।

জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাঁদের। প্রবেশন কর্মকর্তা প্রতি তিন মাস পরপর প্রবেশনার আসামিদের প্রবেশন শর্ত প্রতিপালন ও গতি সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করবেন। তাঁদের প্রবেশন সন্তোষজনক হলে এই দণ্ড তাঁদের চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনোরূপ অযোগ্যতা বলে গণ্য হবে না।

মামলার বাদী তানভীর আলম রিমন বগুড়া থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক মহাস্থানগড়’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি জানান, বগুড়ার বিএনপির রাজনীতি নিয়ে তিনি তাঁর পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এর প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজগর তালুকদার হেনা তাঁকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন।

এই ফেসবুক পোস্টে তাকে অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হয় এবং তাঁকে যেখানে দেখা যাবে সেখানেই মারধরের জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। যুবদল নেতা আদিল শাহরিয়ার গোর্কীও তাঁর ফেসবুকে এই সাংবাদিকের ছবি পোস্ট দেন এবং ক্যাপশনে আপত্তিকর কথাবার্তা লেখেন।

সাংবাদিক তানভীর আলম রিমন আরও জানান, আপত্তিকর এসব ফেসবুক পোস্ট নজরে এলে তিনি ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এর মধ্যে রাজশাহীতেও সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে মামলাটি ঢাকা থেকে রাজশাহী আসে। এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হলো।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন