দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের কাউন্সিলর সাগরিকা
নিজস্ব প্রতিবদেক : দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গ থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেন সুলতানা আহমেদ সাগরিকা। তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তিনটি ওয়ার্ড থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
রাসিকের ৭ নম্বর জোন (১৯, ২০, ২১ নম্বর ওয়ার্ড) থেকে আনারস প্রতীকে ৬ হাজার ২৬৩ ভোট পেয়ে বিজয় লাভ করেন সাগরিকা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোসা. নাজমা খাতুন হেলিকপ্টার প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৭ ভোট। বুধবার রাতে শিল্পকলা এ্যাকাডেমিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটানিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন।
সাগরিকা নগরীর শাহ মখদুম থানার শিল্পীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। হিজড়া বলে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর আর বিদ্যালয়ে টিকতে পারেননি সুলতানা। আগের ক্লাসগুলোও পার করেছেন নানা টিপ্পনীতে। শেষমেশ বাড়িও ছাড়তে হয় তাকে। তিনি দিনের আলো হিজড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাগরিকা বলেন, ‘নির্বাচনে আমার কোনো নেতাকর্মী ছিল না। আমি একাই মানুষের কাছে গেছি। তারা আমাকে পাশে নিয়েছেন। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমার নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়ন করতে কাজ করবো। হিজরাদের উদ্যোক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে চাই। এছাড়াও ওয়ার্ডে গরিব রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া ও ২৪ ঘণ্টা সেবার জন্য হটলাইন নম্বর খোলা হবে আমার অন্যতম কাজ।’
তিনি আরও বলেন, আমার এলাকায় গরিব মানুষ বেশি। তাই আমি মেয়রের কাছে বিশেষ বরাদ্দ চাইবো। জনগণের দ্বারে দ্বারে দিয়ে সেবা দেবো।
তিনি তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম কোনো কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হলেন বলে জানিয়েছে সুলতানা বলেন, ‘আমি বলেছি তিনটি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের কার্যালয় করব। আগে কোনো কার্যালয়ই ছিল না। এই কার্যালয় করার ফলে মানুষ খুব কাছ থেকে আমাকে পাবেন। এটা আমার তিন ওয়ার্ডের মানুষের কথা বলার একটা প্ল্যাটফর্ম হবে।’
সুলতানা মাঠপর্যায়ে এসে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার পর একটা পক্ষ বলতে থাকে যে হিজড়াকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে তারা মানুষের ওপর আরও বেশি অত্যাচার করবেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে খুব সহজে বলা যায় যে তারা অত্যাচারী। কিন্তু আমাদেরও তো পেট আছে। সেই পেট চালানোর জন্য কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। সেটা আগে ছিল না। আগে কেউ কাজও দিতে চাইত না।’
