ফেরত গেল ইছামতি খননের সোয়া ৭ কোটি টাকা

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা : আইনি জটিলতা এবং সংশ্লিষ্টদের যাঁতাকলে ভেস্তে যেতে বসেছে পাবনার ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদীর উদ্ধার অভিযান। কাজ না হওয়ায় ফেরত গেছে বরাদ্দের সোয়া সাত কোটি টাকা। এই নদী উদ্ধারে গততে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল নয় কোটি টাকা। স্থানীয় প্রশাসন সহ নদী উদ্ধার আন্দোলনের সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসিনতাকে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড দায় চাপাচ্ছেন মামলা ও ঠিকাদারের উদাসিনতাকে।
শুরুটা ভালই ছিল। বেশকিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করে উদ্ধার চলচ্ছিল নদী। কিছুদিন দখলদার উদ্ধারের পরেও এখনো মধ্য শহরে মাথা উচুঁকরে দাড়িয়ে প্রভাবশালীদের বড়বড় অট্টালিকা। যা নদী উদ্ধারের সময় ভাঙ্গা হয়নি। নদী উদ্ধার আন্দলনের সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, উচ্চ আদালতের রায়ের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড লোক দেখানো দুর্বল কিছু দখলদারদের উচ্ছেদ করলেও প্রভাবশালীদের এক মাসের সময় দেয়া হয়। এরই মধ্যে নিম্ন আদালতে দায়ের হয় একের পর এক প্রায় ৭৫টি মামলা। সেই সময় নদীর কিছু এলাকা নামমাত্রভাবে খনন করা হলেও আবারও পলি জমে ও ময়লা- আবর্জনা পড়ে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসনের সুত্রে জানাগেছে , দখলদারদের মামলা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
পাউবোর পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে নদীর দুই পাড়ের ৫ দশমিক ৬৭ কিলোমিটারে দখলদার উচ্ছেদের জন্য ২ কোটি ৭৯ লাখ ও ২ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার নদী খননের জন্য ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় এক বছর। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাউবো ১ হাজার ৫৩ টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে। এরপর ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ও পাউবো যৌথভাবে শহরের লাইব্রেরি বাজার ব্রিজ এলাকা থেকে উৎসমুখের দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। উচ্ছেদ করা হয় ৬শ১০টি অবৈধ স্থাপনা।
উচ্ছেদ এলাকায় নদী খননের কাজ শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যেই মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ শেষ না হতেই প্রকল্প এলাকা ছেড়ে চলে যায় । কিন্তু পাউবো আর উচ্ছেদ ও খননকাজ শুরু করতে পারেনি । পাউবো কর্তৃপক্ষের দাবি, মামলা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই তারা উচ্ছেদ ও খননকাজ করতে পারেনি। যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, তাতে বরাদ্দের ৯৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আর বৃদ্ধি না হওয়ায় বাকি টাকা চলতি জুন মাসে ফেরত চলে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি রুহুল আমিন বলেন, পাউবো সঠিকভাবে খনন এলাকা বুঝিয়ে দিতে না পারায় তারা খননকাজ করতে পারেননি। আর যখন প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়ে ছিল, তখন খরচ কম ছিল। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আর কাজ করা সম্ভব হয়নি। নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীতে পানি নেই। পুরো নদী ময়লা- আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে আছে। খনন করা এলাকায় পলি জমে ও ময়লা-আবর্জনায় আবার ভরাট হয়ে গেছে। কিছু দখলদার আবার নদীর জমি নিজের মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কেউবা আবার ঝুলিয়েছেন আইনি নিষেধাজ্ঞার নোটিশ।
এদিকে নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের টাকা ফেরত যাওয়ার খবরে জেলার লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নদী উদ্ধার আন্দোলনের সংশ্লিষ্টরা এবং নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন নদী উদ্ধারের সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতার অভাবে সব ভেস্তে যাচ্ছে। তাদের দাবী ইছামতী নদী পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেওয়ার। ‘ইছামতি নদী খনন জেলাবাসীর প্রাণের দাবি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই নদী খনন বন্ধ হয়ে গেছে। এটা জেলাবাসী কিছুতেই মেনে নেবে না। সেনাবাহিনী নিয়োগ করে হলেও নদীটির দখলদার উচ্ছেদ ও খনন করা হবে বলে প্রত্যাশা করি।’
এ সম্পর্কে পাউবোর পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন বলেন, তিনি নতুন আসায় প্রকল্পটির বিষয়ে তার তেমন কিছুই জানা নেই। যতটুকু জেনেছি মামলার কারনে উদ্ধার অভিযান বন্ধ আছে। তবে আমি বিষয়টি দেখবো। জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, টাকা ফেরত গেলেও নদী খননের জন্য একটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’