রাজশাহীতে ভাতা দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকায় ভোট চাইলেন এমপি

প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৩; সময়: ১১:২৮ pm | 
খবর > নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন আবারও ইউপি নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীন বিভিন্ন ভাতা দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

সংসদ সদস্য বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচনী এলাকার বাইরে পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মাসকাটাদিঘী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় নৌকার প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, হরিয়ানে নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়া হবে।

পবার কাটাখালী পৌরসভা, হরিয়ান ও পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে মাসকাটাদিঘী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ওই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৩ আসনের (পবা-মোহনপুর) সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। ওই সভায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীন ছয় হাজার উপকারভোগী অংশ নেন। সভা শেষে ছয় হাজার প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হয়।

ইউপি (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ২২ ধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি; অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এই বিধি না মেনে হরিয়ান ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আপত্তি তুলেছেন।

গত বুধবার হরিয়ানে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এক সভায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন চেয়ারম্যান লিখিত অভিযোগ দিলেও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। এ ঘটনার পরদিন হরিয়ান ইউনিয়নের পাশে কাটাখালী পৌর এলাকায় বক্তব্য দেন আয়েন উদ্দিন।

সভায় হরিয়ান ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে সাংবদ আয়েন বলেন, ‘হরিয়ান ইউনিয়নবাসীর কাছে আমার অনুরোধ রইল, সামনে যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে আপনারা যদি ভোট দেন, শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়া হবে। শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করবেন। কারও কথায় বিচলিত হবেন না। হরিয়ানসহ পারিলা ইউনিয়নে যে কজন বিধবা আছেন, একজন বিধবাও বাদ যাবেন না। এখানে যাঁরা আছেন, প্রত্যেকের ভাতা ডাবল হবে। আমি শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে বলছি। আপনাদের কাছে দুইটি জিনিস চাই। শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করবেন। তাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাখার জন্য, সম্মান রাখার জন্য নৌকায় ভোট দিবেন। দিবেন তো নৌকাতে ভোট? হাত তুলুন।’

পরে হরিয়ানের নৌকার প্রার্থী আবুল হোসেনকে মাইক্রোফোনের কাছে এনে বক্তব্য শেষ করেন সংসদ সদস্য। সেখানে আবুল হোসেন বলেন, ‘১৭ জুলাই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে আপনাদের সমর্থন আশা করি। সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।’

এ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামা, কাটাখালী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনোয়ার সাদাত, হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম প্রমুখ।

১৭ জুলাই অনুষ্ঠেয় হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৭৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেন (নৌকা প্রতীক), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেবর আলী (মোটরসাইকেল প্রতীক), আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুম মোল্লা (আনারস প্রতীক), জামায়াতে ইসলামী–সমর্থিত প্রার্থী জালাল উদ্দিন (চশমা প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রউফ (ঘোড়া প্রতীক) ও আতিকুর রহমান (চশমা প্রতীক)।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেবর আলী বলেন, গত বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য নির্বাচন এলাকার বাইরে সভা করে ভোট চেয়েছেন। সেখানে হরিয়ানের ভোটাররা ছিলেন। নির্বাচনের আগে তিনি এ ধরনের সভা করতে পারেন না। জেবর আলী আরও বলেন, এ বিষয়ে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থাই নেননি। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।

তবে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জুন নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী জেবর আলীর করা লিখিত অভিযোগের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার নৌকার প্রার্থী আবুল হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সেই নোটিশের জবাব আজ শুক্রবার দিয়েছেন তিনি। জবাবে নৌকার প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, নোটিশের জবাব অফিসে এসেছে। তিনি শনিবার তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে জবাবটি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন। কাটাখালী পৌরসভায় প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের ভোট চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে সেটা নির্বাচনী এলাকার বাইরে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে বিষয়টি দেখবেন। সূত্র- প্রথম আলো

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন