রাজশাহীতে বাড়ি বাড়ি এডিস মশার চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে বাড়ি বাড়ি চাষ হচ্ছে এডিস মশা। ৭৫টি বাড়ির নমুনার মধ্যে ২৮টিতেই এডিসের লার্ভা মিলেছে। অর্থাৎ ৩৭ শতাংশ বাড়িই এডিসের প্রজননক্ষেত্র। স্বাস্থ্য বিভাগের টিম ৫ দিন ধরে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সম্ভাব্যস্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। সেগুলোর নমুনার পরীক্ষা করা হয় ল্যাবে। সোমবার বিকালে এর ফলাফল পাওয়া গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ে রাজশাহীর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে এডিসের লার্ভা ধ্বংসে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
জানা গেছে, গত ১৪ জুন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। সোমবার পর্যন্ত ৪৫ জন রোগী ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তবে এদের মধ্যে ২৯ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। আর একজন মারা গেছেন। ফলে সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ১৫ জন। ভর্তি রেজিস্ট্রারে তিনজন ছাড়া সবারই ট্রাভেলিং হিস্ট্রি হিসেবে ঢাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মদ জানান, এ পর্যন্ত যেসব ডেঙ্গু রোগী এসেছেন, তারা সবাই ঢাকায় ছিলেন। সেখান থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু নিয়ে এসেছেন। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডটিকে ডেডিকেটেড করা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ৫ সদস্যের চিকিৎসক টিম গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় টিকাসহ সব ওষুধই হাসপাতালে আছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্সও রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের উদ্যোগে গত ৬ জুন থেকে রাজশাহী মহানগরীতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র শনাক্ত করতে কয়েকটি টিম মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে। মহানগরীর ৫টি ওয়ার্ডের ১৫ করে মোট ৭৫টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সোমবার স্বাস্থ্য বিভাগের ল্যাবে নমুনাগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শেষ হয়। এতে ধরা পড়ে ৭৫টি বাড়ির মধ্যে ২৮টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। এগুলো থেকে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল বাশার তালুকদার বলেন, ‘জানুয়ারি থেকেই রাজশাহী বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়ে। এ পর্যন্ত মোট ৭৫ জন ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তবে বর্তমানে এই বিভাগে মোট চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১৭ জন। এর মধ্যে রামেক হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৫ জন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সিটি করপোরেশন র্যানডম সিলেকশনের মাধ্যমে এলাকার ৭৫টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম। তাতে এজিপ্টাই মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। এজিপ্টাই এবং এলবোপিক্টাস এই দুই প্রজাতির লার্ভাই মিলেছে। দুটো মিলে ডেঙ্গু ছড়াতে থাকলে পরিস্থিতি তো উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে। তাই লার্ভা ধ্বংসে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেয়া হবে।’
এদিকে গত বুধবার সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সভায় এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসে কোনো ধরনের ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়নি। নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবেই ড্রেনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু বলেন, রাজশাহীর অবস্থাও এখনো ভালো। তবে সতর্কতা হিসেবে আমাদের কর্মীরা এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগরবাসীকে সচেতন করবেন, যেন কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে না থাকে। শহরের ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় আরও জোর দেওয়া হবে এবং এডিসের লার্ভা ধ্বংসে ড্রেনগুলোতে স্প্রে করা হবে। কোথাও কোথাও এটি শুরুও হয়েছে। এছাড়া মসজিদে জুমার নামাজের আগে খুৎবায় এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে ইমামদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এখনো বিশেষ কোনো ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়নি। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। সূত্র- আমাদের সময়