আয় কম হলেও, সৎ পথে রোজগার করি

ইন্দ্রাণী সান্যাল: এখন জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। চা বিক্রি করে আয় তেমন হয় না। এই সামান্য আয়ে সন্তানদের আর সংসারের খরচ হয়না। খুব কষ্ট করে চলতে হয়। তারপরও যা আছে আমি তা নিয়ে খুশি। আয় কম হলেও সৎ পথে রোজগার করি।
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পন্ঞ্চাশোর্ধ বয়সী রাশেদা বেগম। তিনি রাজশাহী মহানগরীর পদ্মার পাড়ে অস্থায়ী বস্তিতে থাকেন। সংসার জীবনে তার দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানোর পর বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট মেয়ে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।
রাশেদা বেগম আগে গৃহিনী ছিলেন। চায়ের দোকানটি তার স্বামী জমিল উদ্দীনের ছিলো। করোনা তে তার স্বামী মারা যায়। তারপর সংসারের হাল ধরতে তিনি এখন দোকানটি চালান। সম্প্রতি রাশেদা বেগমের সঙ্গে রাজশাহীর গনকপাড়াতে আলাপচারিতায় এসব তথ্য জানা যায়।
রাশেদা বেগম বলেন, প্রতিদিন সকাল ৬টায় এসে দোকান খুলি। সকালে অনেকে হাটটে বের হয় তখন অনেকেই আমার দোকানে এসে চা খান।
এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যা বেচা-বিক্রি হয়, সেটাই আমার আয়। এই আয় দিয়ে কোনো মতে টিকে আছি। বেঁচে থাকার জন্য কষ্ট তো করতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বামী মারা যাবার পর অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছি। আমি লেখাপড়া জানিনা আমার মেয়েটাকে একটা চাকরি দিতে বলেছি কিংবা কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। বিপদে পড়লে আসলে সবাইকে চেনা যায়। আমি কাজ করে খেতে পছন্দ করি। শরীর-স্বাস্থ্য আল্লাহ ভালো রাখছেন। তাই নিজে রোজগার করে চলি।
বেচাবিক্রি ও সংসারজীবন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, আমার দিনটা কোনো মতে কেটে গেলেই ভালো। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালোই ব্যবসা হয়।
তিনি বলেন, আমার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। আগে তো জিনিসপত্রের দাম কম ছিল, মাঝেমধ্যে মাছ-মাংস খাওয়া হতো। এখন সেসব খাওয়ার চিন্তা করি না। তবে বিক্রি ভালো হলে সেদিন একটু মাছের মুখ দেখতে পাই।
রাশেদা বেগম বলেন, জীবনে তো অনেক মানুষকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখলাম। অবৈধ পথে চলতে বা আয়রোজগার করতে চাইনা। শুধু ভালো ভাবে দিন গেলেই হলো। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি আরেকটাকে ও দিতে পারলে আমার শান্তি। তারপর একা মানুষ চলেই যাবে কোনোমতে। হাজার কষ্ট হলেও রোজগার করবো সৎ পথে।