হামাসের উৎপত্তি ও বর্তমান রূপের মূলে কী?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : শনিবার ভোর থেকে ইসরাইলে অতর্কিত আক্রমণ করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ ভেদ করে এই প্রথম কোনো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এত বড় পরিসরে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। ইসরাইলও প্রতিশোধ হিসেবে গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করছে। চলমান প্রচণ্ড লড়াইয়ে এ পর্যন্ত উভয়পক্ষে নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।
দশকের পর দশক ধরে ইসরাইলের চালানো বর্বরতা ও নৃশংসতার জবাব দিতে হামাস এ লড়াই শুরু করার কথা জানিয়েছে। হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আল-জাজিরাকে বলেছেন, কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা যে নৃশংসতার মুখোমুখি হয়েছে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চালানো হয়েছে এ আক্রমণ। আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গাজায় আমাদের পবিত্র স্থান আল-আকসায় নৃশংসতা বন্ধ করুক।
যেভাবে হামাসের যাত্রা শুরু
মিশরের ইসলামী রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড। দখলদার ইসরাইলিদের কাছে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি মিশরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ব্রাদারহুডের আদর্শে দীক্ষা নেন। ১৯৮৭ সালে এমনই দুজন আহমেদ ইয়াসিন ও আব্দেল আজিজ আল-রানতিসি প্রতিষ্ঠা করেন হামাস। হামাস হচ্ছে, হারকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া- এর সংক্ষেপ, যার অর্থ ইসলামী নবজাগরণের আন্দোলন।
হামাস শব্দের অর্থ- উদ্দীপনা, গভীর দেশপ্রেম। সাংগঠনিক সনদ অনুযায়ী, দখলদার ইসরাইলি রাষ্ট্রকে উৎখাত করে একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করাই হামাসের লক্ষ্য। পরবর্তীতে অবশ্য সংগঠনটি বলেছে, ইসরাইল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধপূর্ব সীমানায় ফিরে গেলে, অর্থাৎ ওই যুদ্ধের সময়ে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলে এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সেখানে ফিরতে দিলে তারা ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কিন্তু, ইসরাইল এ প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেয়। দখলদার শক্তিটি ফিলিস্তিনের এক ইঞ্চি ভূমিও ছাড়তে রাজি নয়।
হামাসের সাংগঠনিক কাঠামো
হামাসের প্রধান শাখা দুটি। এর একটি সাংস্কৃতিক, যার নাম দাওয়াহ। সামরিক শাখার নাম ইজ্জ আদদ্বীন আল-কাসসাম ব্রিগেডস। হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে ইরান, এবং ইরান সমর্থিত সিরিয়ার সরকার ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। এই জোটের সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির ঘোর-বিরোধী।
গত কালকের আক্রমণ সম্পর্কে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ ঘটনা দখলদারিত্বের মুখে ফিলিস্তিনি জনগণের গভীর আস্থার প্রমাণ।
গাজা ছাড়াও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের সমর্থকরা রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমাদের সমর্থক সরকার থাকলেও, সাধারণ জনগণের কাছে হামাসের গ্রহণযোগ্যতা আছে। ইতোমধ্যেই সিরিয়া, ইরান ও ইয়েমেন হামাসের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে এই আক্রমণকে ‘বীরোচিত’ ও ‘গর্বের’ বিষয় বলে অভিহিত করেছে।
আরব লীগ ও জর্ডান বর্তমান সংঘাত শুরুর পেছনে দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের চালানো নিষ্ঠুরতাকে দায়ী করেছে। সৌদি আরব, মরক্কো এবং ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ দোসর মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসির সরকার অস্ত্র সম্বরণের আহ্বান জানিয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে আছে– যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মিশর ও জাপান।
হামাস কি বেসামরিকদের হত্যা করছে?
হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান আল-জাজিরাকে বলেছেন, হামাস বেসামরিকদের ওপর হামলা করছে না। যদিও এর আগে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি অভিযোগ করে, হামাসের হাতে ইসরাইলি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
অ্যামনেস্টিকে উদ্দেশ্য করে ওসামা হামদান বলেন, বসতি স্থাপনকারী এবং বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে। বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের আক্রমণ করেছে।
এ সময় দক্ষিণ ইসরাইলের বেসামরিক নাগরিকরাও বসতি স্থাপনকারী কিনা জানতে চাইলে হামদান বলেন, সবাই জানে সেখানে বসতি রয়েছে। আমরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বেসামরিক কাউকে লক্ষ্যবস্তু করছি না। আমরা ঘোষণা করেছি বসতি স্থাপনকারীরা দখলদারত্বের অংশ এবং সশস্ত্র ইসরাইলি বাহিনীর অংশ। তারা বেসামরিক নয়।