বার্তা বুঝতে না পেরে স্বতন্ত্রে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা, সমাধান শিগগিরই

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ডামি প্রার্থী বা কেউ বিনা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়া যাবে না, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বার্তার অপব্যাখ্যা করে মনোনয়নবঞ্চিতরা অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে গেছেন বলে জানালেন দলটির সিনিয়র নেতারা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে একটা হ য ব র ল অবস্থার সৃষ্টি করেছেন তারা। তবে কেন্দ্রীয় নেতার হস্তক্ষেপে দ্রুতইএই অবস্থার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
বিদ্রোহীরাই পথের কাঁটা এখন আওয়ামী লীগের। তাই দলের টিকিট পেয়েও স্বস্তিতে নেই অনেক প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলের নমনীয়তার আভাসে বেশ কিছু আসনে প্রার্থী হয়েছেন দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা। হেভিওয়েট বিদ্রোহীরা তাই মাথা ব্যথার কারণ হয়েছেন নৌকার প্রার্থীদের। এ ইস্যুতে দলীয় প্রধানের বার্তার ভুল ব্যাখ্যাতেই এমন হ য ব র ল বলছেন শীর্ষ নেতারা। প্রত্যাহারের সময় সব ঠিক হয়ে যাবে বলেও মনে করেন তারা।
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়ে এসে যেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের হিড়িক পড়েছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। এরইমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়া সবগুলো দলই নিশ্চিত করেছেন নিজেদের প্রার্থিতা। তাই শেষ দু’দিনে যেন ঢল নামে প্রার্থীদের।
অংশগ্রহণমূলক দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিশ্চিতে এমন পরিবেশ ইতিবাচক হলেও চিন্তার ভাঁজ নৌকার টিকিট পাওয়া কিছু প্রার্থীর কপালে। মনোনয়ন চাওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের বিশেষ বার্তা আর বিদ্রোহীদের ক্ষেত্রে নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিতে যেন এখন বেসামাল কিছু আসন।
দলের মনোনয়নবঞ্চিত বেশ কিছু নেতা হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। যার মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী হওয়ায় শঙ্কা রয়েছেন নৌকার মধ্যেই বিভেদের।
বরিশাল-২ এর মনোনিত প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, দলীয় যে পদে যারা আসীন আছেন, তারা যদি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, তাহলে অবশ্যই এটা অস্বস্তিকর বিষয়। আমি মনে করি, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে চলবেন।
পিরোজপুর-১ আসনে মনোনিত প্রার্থী শ ম রেজাউল করিম বলেন,ঘোষিত প্রার্থীর বাইরে, আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কেউ যদি নির্বাচন করেন; তাহলে ধরে নিতে হবে, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মানেন না। বরং কর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।
খুলনার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারী বলেন, নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, কিন্তু ভোটারদের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। ভোটররা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেন।
তবে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলীয় প্রধানের বক্তব্যের ভাবার্থ ঠিক বুঝতে পারেননি অনেকেই, তাই তৈরি হয়েছে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগেই সব সমন্বয় হবে বলে মনে করেন তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ডামি প্রার্থী, কেউ বিনা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়া যাবে না, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ যে বার্তাটা, এই বার্তাটার অপব্যাখ্যা করে আমাদের মনোনয়নবঞ্চিতরা দাঁড়িয়ে গেছেন। একটা হ য ব র ল পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আমি মনে করি, কেন্দ্রীয় নেতার হস্তক্ষেপে শিগগিরই নিরসন হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়ে সবভেবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের মনোনয়ন দেয়ার আগে সবশেষ বৈঠকে (মনোনয়ন বোর্ড সভা) কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন। পরিবর্তিত কোনো ইঙ্গিত বা নির্দেশনা আসলে আমরা সে অনুসারে কাজ করবো।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের বিপরীতে ২৯৮টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
চলতি মাসের ১৫ তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হবিবুল আউয়াল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়নের আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে। গত ১ নভেম্বর থেকে এবারের নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির। সে অনুসারে ১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।