জাসদের পক্ষে আর ভাড়ায় খাটতে চান না আওয়ামী লীগ নেতারা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩; সময়: ১১:৫৫ am | 
খবর > নির্বাচন

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বদলে গেছে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে নির্বাচনী মাঠের চিত্র। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কামারুলের অনড় অবস্থানের কারণে জাসদ নেতাকর্মীদের অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।

কামারুল শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকলে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে মানুষ আগেভাগেই নানা সমীকরণ টানছে। বিশেষ করে ভেড়ামারা জাসদ কিছুটা সক্রিয় থাকলেও মিরপুরে ঝিমিয়ে পড়েছে। আর এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা আর ভাড়ায় খাটতে রাজি নন। হয় নৌকা প্রতীক, না হয় দলের স্বতন্ত্রের জন্য কাজ করবেন তারা।

বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষিপ্ত কিছু সভা-সমাবেশ করলেও ভোটের মাঠে জাসদ আছে বেকায়দায়। মাঠে ভূমিকা রাখা মূল খেলোয়াড় নিজেই প্রার্থী হওয়ায় জাসদের প্রার্থী হাসানুল হক ইনুর এখন ঘুম হারাম। ইনু তার বক্তব্যে প্রতিপক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো পদধারী নেতা নয়, কামারুলকে নিয়ে এখন বিপদে আছেন বলে জানান।

স্থানীয় দুই দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত তিনটি নির্বাচনে কামারুল নৌকাকে জেতাতে বড় ভূমিকা রাখেন। তার সকল কর্মী-সমর্থক ইনুর পক্ষে কাজ করেন। এবার তার সমর্থকরা বলছেন, তারা আর জাসদের হয়ে ভাড়া খাটবেন না, নিজেদের প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন।

মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আলী বলেন, ‘কামারুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা সংশয় কাজ করছে। বিষয়টির সমাধান না হলে কী হবে সেটা বলা মুশকিল। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি কীভাবে সমাধান করা যায়!’

বিগত তিনটি নির্বাচনে হাসানুল হক ইনুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তার পক্ষে মাঠে নামার নির্দেশনা থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেয়ার বিষয়ে এবার কোনো নির্দেশনা নেই। আর সরকারের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে অনড় অবস্থান বজায় রাখার ইঙ্গিত দেয়ায় মাঠে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কুষ্টিয়া-২ আসনে।

বিশেষ করে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন টেনশন আর কাজ করছে না। এতে ফুরফুরে মেজাজে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনও। তিনি প্রতিদিন বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তি সমাবেশ ও সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরছেন। এতে সব পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকছেন। এছাড়া জাসদের সাবেক কয়েকজন চেয়ারম্যান ও পদে নেই এমন নেতাকর্মীদের অনেকেই কামারুলের পক্ষে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নে এক শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নেতাকর্মীরা। সেখানে স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, ‘আমরা বিগত ১৫ বছর ধরে জাসদের হয়ে ভাড়া খেটেছি। নির্বাচিত হয়ে ইনু সাহেব ও তার কয়েকজন নেতা সব সুবিধা ভোগ করেছেন। আমাদের সংগঠন দুর্বল করার চেষ্টা হয়েছে। আমরা এবার আর ভাড়া খাটতে রাজি নই। এবার হয় আমাদের নৌকা দিতে হবে, না হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুলকে জয়ী করতে যা করার তাই করবেন দলের কর্মীরা।’

মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী কামারুল আরেফিন। তার জন্য দলের নেতাকর্মীরা এক হয়ে কাজ করবেন। আমরা কারো পক্ষে আর ভাড়া খাটতে রাজি নই। আমাদের সংগঠন বাঁচাতে হলে নিজেদের এমপি প্রয়োজন।’

জাসদের মূল ঘাঁটি ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রামেও কামারুল বড় শান্তি সমাবেশ করে তার উত্থানের বিষয়টি জানান দিয়েছেন এরই মধ্যে। দুটি উপজেলাতেই ভোটের মাঠ গরম হয়ে ওঠেছে। কামারুলকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার পর থেকে জাসদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা এখন কামারুলকে ম্যানেজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন।

জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, ‘হাসানুল হক ইনু যদি ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পায়, তাহলে নৌকার নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল সক্রিয় থাকায় নেতাকর্মীদের মাঝে অন্য রকম বার্তা যাচ্ছে।’

আর মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন বলেন, ‘আমি ফুরফুরে মেজাজে আছি। শুধু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নয়, সাধারণ মানুষও আমাকে ভালবাসেন – এটা আরেকবার প্রমাণ করেছেন দুই উপজেলার মানুষ। আমি তাদের ভালবাসার প্রতিদান দিতে চাই। নির্বাচনে আমার ওপর কোন চাপ নেই। বরং সকলে উৎসাহ দিচ্ছেন। তিনি (হাসানুল হক ইনু) জাতীয় নেতা, নৌকা প্রতীক পেলে উনি নির্বাচন করবেন, আমিও জনতার নেতা হয়ে মাঠে থাকব।’

কুষ্টিয়া-২ আসননে জোটের প্রার্থী হিসেবে ইনুকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়। এখানে কামারুল আরেফিন ছাড়া আরও ৯ প্রার্থী মাঠে আছেন।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন