পাবনা-২ আসনে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা

এম এ আলিম রিপন, সুজানগর : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৬৯ পাবনা-২ সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ভোটের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারেরা বলেন, নির্বাচনী মাঠে একের বিরুদ্ধে অপরের অভিযোগ করাটাই যখন রীতিতে পরিণত হয়েছে, তখন পাবনা-২ আসনে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নেই কোন অভিযোগ, মিলেমিশে করি ভোট। মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা যে যাঁর মতো প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রচারণায় কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ বিদ্বেষ প্রচার করছেন না, সবাই নিজের পক্ষে ভোট চাইছেন। তবে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন(বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী কন্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনীও চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, আচারণবিধি মেনে আমার নৌকা প্রতীকে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।আমাদের প্রার্থীদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। সকলেই একে অপরের সঙ্গে কথা বলি।
এ কারণে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও সৌহার্দ্য রয়েছে। ভোটের মাঠে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর যারা প্রার্থী রয়েছে তারাও আমার মতো তাদের দলীয় প্রতীকে ভোট চেয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে আমি মনে করি। আমরা যারা প্রার্থী রয়েছি তারা সবাই এ অঞ্চলেরই মানুষ, নির্বাচনী এলাকার সৌহার্দ্য ও শান্তি বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন(বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী কন্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী মঙ্গলবার এ প্রতিনিধিকে জানান, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রচারণা চালাচ্ছি। প্রচারণার ব্যস্ততার ফাঁকেও প্রার্থীরা এক অপরের খোঁজ খবর রাখছি। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক এটাই আমি চাই ।
যার প্রতি আস্থা পাবে ,জনগণ তাকে ভোট দেবে। সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, সুজানগর উপজেলার মানুষ শান্তিপ্রিয়। আমরা দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আমাদের দল বাংলাদেশ আওয়ামলীগ মনোনীত প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবিরকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে এবং সরকারের উন্নয়ন অব্যহত রাখার জন্য ভোটারদের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভোটারেরা আগামী ৭ জানুয়ারী ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী করবে ইনশআল্লাহ । সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার সুখময় সরকার জানান, এখন পর্যন্ত পাবনা-২ আসনে কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি।
আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক পরিবেশ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি। কোথাও কোন অপ্রীতিকর পরিবেশের সৃস্টি হলে অথবা কেউ আইন অমান্য করলে বিধি অনুযায়ী সেই প্রার্থী বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুজানগর উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবুল কালাম জানান, এবারের এ নির্বাচনে পাবনা-২ আসনে সংসদ সদস্য পদে সর্বমোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির নৌকা প্রতীক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী ডলি সায়ন্তনী নোঙ্গর প্রতীক, ন্যাসনাল পিপলস্ পার্টি মনোনীত প্রার্থী আজিজুল হক আম প্রতীক, তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ সোনালী আশ প্রতীক, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মেহেদী হাসান রুবেল নাঙ্গল প্রতীক, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন মনোনীত প্রার্থী মোমিনুল ইসলাম ফুলের মালা প্রতীক এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল(জাসদ) মনোনীত প্রার্থী শেখ আনিসুজ্জামান মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পাবনা-২ সংসদীয় আসন। এ আসনে ভোটার সংখ্যা সর্বমোট ৩ লাখ ৪৮ হাজার ২০৯ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা রয়েছে ১০৮ টি। এর মধ্যে সুজানগর উপজেলায় ৭২টি এবং বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানায় রয়েছে ৩৬টি।
প্রসঙ্গত,মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ আসনে পাঁচবার আওয়ামী লীগ, তিনবার বিএনপি ও একবার জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হায়দার আলী, ১৯৭৯ সালে বিএনপির এম এ মতিন ও ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সংসদ সদস্য হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ওসমান গণি খান (ওজি খান) আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহমেদ তফিজ উদ্দিন মাস্টারকে হারিয়ে বিজয়ী হন। আবার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহমেদ তফিজ উদ্দিন দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী ওজি খানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তবে তফিজ উদ্দিন মাস্টার নির্বাচিত হওয়ার দুই বছরের মাথায় মারা যাওয়ায় ১৯৯৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর এ আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত হ্যাবিওয়েট প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় সর্বাধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) একে খন্দকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা হাবিব এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খন্দকার আজিজুল হক আরজু এবং সবশেষ ২০১৮ সালে সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আহমেদ তফিজ উদ্দিন মাস্টারের ছেলে আহমেদ ফিরোজ কবির আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন।