ঝুঁট কাপড় দিয়ে ভাগ্যবদল আহসান হাবিবের

সানজাদ রয়েল সাগর, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় প্রায় ১৬টি কারখানায় ঝুঁট কাপড়ের সুতা থেকে তৈরি হচ্ছে পাপোশ। আর এই পাপোশ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায় ও রাজধানীতে। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪শথেকে ৫ শত হতদরিদ্র নারী-পুরুযষের।
তবে প্রশিক্ষণসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কাজের পরিধি আরো বাড়বে। সেই সাথে আরো অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। উপজেলার কোলা ও মিঠাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে ঝুঁট কাপড়ের সুতা থেকে পাপোশ তৈরির কারখানা ।
কোলা ইউনিয়নের ভান্ডারপুর গ্রামের যুবক আহসান হাবিব হাসান। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে গত ৪ বছর আগে গ্রামে এসে কিছু করার উদ্যেশে গড়ে তুলেন পাপোশ তৈরির কারখানা। যার নাম দিয়েছেন আলহাজ্ব ট্রেডার্স।
উদ্যেশ্য ছিলো নিজে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকাবাসীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। শুরুতেই তিনি একটি মেশিন দিয়ে চারজন কারিগর নিয়ে এই ঝুঁট কাপড় থেকে পাপোশ তৈরি শুরু করেন। প্রথমে ঝুঁট কাপড় থেকে সুতা বের করে তৈরি করা হয় দড়ি। তারপর সেই দড়ি থেকে তৈরি হয় সুন্দর পাপোশ।
বর্তমানে তার কারখানায় পাঁচ সেট মেশিন দিয়ে পাপোশ তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে ৭২ জন হতদরিদ্র নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যাদের অধিকাংশ নির্যাতিতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা গৃহবধু। প্রতিদিন এই কারখানা থেকে প্রায় এক হাজার পিস পাপোশ ও দেড় হাজার পিস টেবিল ম্যাট তৈরি করা হচ্ছে। এসব পাপোশ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলায় সরবরাহ করা হয়।
উদ্যোক্তা আহসান হাবিব জানান, শুরুতে একটি মেশিন প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে চারজন কারিগর দিয়ে দড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। এর দেড় বছর পর আরো দুইটি মেশিন কিনে জনবল বাড়ান তিনি। কাঁচামাল ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হয়। ঝুঁট কাপড়ের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। বর্তমানে তিনি ৯০-১১০ টাকা কেজি দরে ঝুঁট কাপড় কিনছেন। যা আগে ছিল ৭০-৭৫ টাকা কেজি। এছাড়া রঙ্গিন কাপড় কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। ঝুঁট কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের পরিমান কমে গেছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন আমার এই কারখানায় প্রায় এক হাজার পিস পাপোশ এবং টেবিল ম্যাট প্রায় দেড় হাজার পিস তৈরি হয়। প্রতিপিস ১৩ বাই ২০ ইঞ্চি আকারের পাপোশ ৬৫ টাকা এবং ১১ বাই ১৯ ইঞ্চি আকারে পাপোশ ৫৫ টাকা। এছাড়া টেবিল ম্যাট ৬ ইঞ্চি আকারে ১৩ টাকা, ৭ ইঞ্চি আকারে ১৭ টাকা এবং ৮ ইঞ্চি আকারে ২৩ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করা হয়। শ্রমিকরা প্রতিপিস পাপোশের মজুরি পান ৮-৯ টাকা এবং টেবিল ম্যাট ৩-৪ টাকা। খুব সীমিত লাভে এসব বিক্রি করা হয়।
আহসান হাবিবের এই সফলতা দেখে এই এলাকায় আরো ১৫টি পাপোশের কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন প্রায় ১৬টি কারখানা থেকে প্রায় ২ লক্ষ টাকার পণ্য উৎপাদন হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও যশোর সহ কয়েকটি জেলায় এসব পন্য সরবরাহ করা হয়। তবে ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের অর্থ সংকটে পড়তে হয়। স্বল্পসুদে ঋণ সহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবী জানিয়েছেন এসব কারখানার মালিকরা।
এসব কারখানায় প্রায় চার থেকে পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করছেন এলাকায় হতদরিদ্র নারী-পুরুষ। প্রতিদিন এক এক জন শ্রমিকরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পায়। কারখানায় কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে তাদের। তবে বিদ্যুৎতের ঘনঘন লোডশেডিংএ উৎপাদন কম হওয়ায় কমছে তাদের আয়।
আহসান হাবিবের কারখানার ইনচার্জ আসমা খাতুন বলেন, কারখানার শুরু থেকে কাজ করছি।
শুরুতে সুতা বাছাইয়ের কাজ করতাম। এক বছর পর থেকে কারখানার তদারকির কাজ করছি। প্রতিমাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পাই। এখানে ৬৫ জন মহিলা ৭ জন পুরুষ কাজ করে। এখানে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিকরা মোটামুটি আয় করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে।
কারিগর গৃহবধূ নিরা সুলতানা বলেন, কারখানায় যারা আমরা কাজ করছি সবাই হতদরিদ্র। এখানে কাজ করে বাড়তি আয় হয়। প্রডাকশনে কাজ করা হয়। যতো গুলো পন্য তৈরি হয় ততো টাকা পাওয়া যায়। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় মজুরি পাওয়া যায়। এতে করে সংসারে স্বচ্ছলতা এসছে।