জয়পুরহাটে হুমকি পাওয়া সেই বিচারককে প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট : হুমকি পাওয়া জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক আব্বাস উদ্দীনকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রনালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ। সেখানে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব (প্রশাসন-১) মোহাম্মদ ওসমান হায়দার স্বাক্ষর করেছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে এটি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা ও দায়রা জজের মনোনীত কর্মকর্তার কাছে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাকে বর্তমান কর্মস্থলের পদে থাকা দায়িত্বভার অর্পণ করে অবিলম্বে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের কথা বলা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন জানান, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আব্বাস উদ্দীনকে বদলি করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। পত্রটি আমরা পেয়েছি মঙ্গলবার বিকেলে।
উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে জয়পুরহাট জেলা শহরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় বিচারক আব্বাস উদ্দীনের ভাড়াবাসায় ঢুকে দুষ্কৃতকারীরা চুরি করার পাশাপাশি তাকে ফাঁসি দেওয়ার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বিচারক আব্বাস উদ্দীন বাদী হয়ে চুরি ও হুমকির অভিযোগে থানায় মামলা করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে হাউজিং এস্টেট এলাকায় মো. আব্বাস উদ্দীনের ভাড়াবাসায় কেউ প্রবেশ করে ঘরের দরজার লক খোলার চেষ্টা করে।
এসময় ভেতর থেকে বিচারক ও তার স্ত্রী চিৎকার করে পাশের বাসায় ভাড়া থাকা পুলিশের এক সদস্যকে ডাকেন। এ সময় একজন বিচারককে বলে- ‘তুই বেদীন ও আমার লোকদের ফাঁসি দিয়েছিস, এখন তোরে ফাঁসি দেব’।
এসময় পুলিশ সদস্য আরিফুলের উপস্থিতিতে দুষ্কৃতকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে বাসার মালিকসহ আরও কয়েকজন দেখতে পান, একটি রুমে জানালার গ্রিল কাটা এবং ড্রয়িং রুমে রাখা একটি ব্রিফকেসের মালামাল ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় রয়েছে।
ওই ব্রিফকেসের মধ্যে দুই ভরি ওজনের দুটি স্বর্ণের চুড়ি, দুই ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও এক ভরি ওজনের দুটি কানের দুল ছিল। এসব স্বর্ণ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা ওই দুষ্কৃতকারীরা চুরি করে নিয়ে গেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ৩১ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলায় রায় দেন বিচারক মো. আব্বাস উদ্দীন। ওই মামলার আসামি ছিলেন বেদারুল ইসলাম বেদীন, সরোয়ার রওশন, মশিউর রহমান, মনোয়ার হোসেন, নজরুল ইসলাম, রানা, শাহী, টুটুল, সুজন, রহিম ও ডাবলু।
রায়ে এই ১১ জন আসামির মৃত্যুদণ্ডসহ প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। বিচারক আব্বাস উদ্দীনের ধারণা, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা নিজেরা বা দলীয় লোকজনকে দিয়ে তাকে হত্যা করার জন্য এমনটি ঘটিয়েছে।
ওই ঘটনায় বিচারকের করা মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাগর হোসেন ও সুমন চক্রবর্তী নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার দুজনের কাছ থেকে পুলিশ উল্লেখযোগ্য তথ্য পায়নি।
পরে সুমনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তার কাছ থেকেও কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিউল আলম।