নন্দীগ্রামে আলুর দাম প্রতি বিঘা বিক্রি এক লাখ টাকা

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৪; সময়: ১২:৪৫ pm | 
খবর > অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, নন্দীগ্রাম : বগুড়ার নন্দীগ্রামে চলতি রবি মৌসুমে কমেছে আলুর ফলন। তবে বেড়েছে আলুর দাম। বাড়তি দামে আলু বিক্রি করে খুশিতেই আছে উপজেলার কৃষকরা। এ বছর আলু চাষের শুরুতেই গাছে পচন ধরায় অনেক কৃষক নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত আলুগাছ জমিতে রাখতে পারেনি। তাই সময় পূর্ণ হওয়ার আগেই তাদের আলু তুলতে হয়েছে।

সেসময় প্রতি বিঘা জমিতে ৫০-৬০ মণ হারে আলুর ফলন হয়েছে। তখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৩০-৩৮ টাকা দরে। এতে কৃষক এক বিঘা জমি থেকে ৭০-৮০ হাজার টাকা হাতে পায়। আর সময় পূর্ণ করে এখন যারা আলু তুলছেন তাদের প্রতি বিঘায় ৯০-১২৫ মণ হারে আলুর ফলন হচ্ছে। এখন পাইকাররা এক কেজি আলু কিনছেন ২২-২৩ টাকা দরে। তাতে কৃষক এক বিঘা হতে ৮৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা হাতে পাচ্ছেন।

সরেজমিনে উপজেলার কদমকুড়ি, বড়ইচরা, হাজাকি, কাথম ও সিংজানী মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, একটি জমিতে অনেক লোক দিয়ে আলু তুলে নিচ্ছে কৃষক। ওই আলুগুলো বস্তায় প্যাকেট করে জমির থেকে বাইসাইকেলে করে পাকা রাস্তায় নিয়ে আসছে। এরপর পাইকাররা ট্রাক যোগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সেই আলু পাঠিয়ে দিচ্ছে।

উপজেলার হাজাকি গ্রামের কৃষক ধনঞ্জয় সরকার বলেন, আলুর গাছ যাদের এখন পর্যন্ত ভালো আছে তাদের ফলন ১০০-১৩০ মণ হচ্ছে। আমার এক বিঘা জমিতে ১৩৭ মণ আলু হছে। দাম ভালো পাইনি। ১৯ টাকা করে বিক্রি করে এক লাখ ৪ হাজার টাকা হাতে পাছি। গত বছরের চেয়ে এবার আলুতে কৃষক প্রায় ডবল টাকা পাচ্ছে।

সিংজানী গ্রামের কৃষক মখলেছুর রহমান বলেন, আমার ৪ বিঘা জমিতে আলু আছে। আলু ২২ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আগামী কাল আলু তোলা শুরু করব। যারা আলু তুলেছে তাদের ৯০ থেকে ১২০ মণ পর্যন্ত ফলন হচ্ছে। আলু চাষে খরচ শুরু থেকে বীজ ২ হাজার ৫শো, হাল চাষ ২ হাজার, লাগানো ২ হাজার, পানি সেচ ১ হাজার ৫শো, ইউরিয়া সার ২বস্তা ২ হাজার ৮শো, ডিএপি ২বস্তা ২ হাজার ২শো, পটাশ দেড় বস্তা ১ হাজার ৬শো, জৈব সার ৬শো, জিপ সার ৪শো, বোরন ৩শো, দোস্তা ৩শো, কীটনাশক ৬ হাজার, কীটনাশক ছিটানো ১ হাজার, গাছ বেঁধে দেওয়া ২ হাজার ও আলু তোলা ৫ হাজার টাকা। মোটামটি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আলু চাষে খরচ হয়।

কাথম গ্রামের কৃষক বুলু মিয়া বলেন, আমার ২৪ বিঘা জমিতে আলু ছিল। গাছে পচন লাগার কারণে আগেই ৮ বিঘা জমির আলু তুলে বিক্রি করেছি। তখন ফলন হছে বিঘায় ৫০ মণ। বিক্রি করেছি ৩৮ টাকা কেজি দরে। তাতে ৭৫ হাজার টাকার মত বিঘায় পাছি। পরের গুলাতে ফলন বেশি হছে কিন্তু দাম কম পাছি। গড়ে ৮৫ হাজারা টাকা বিঘা বিক্রি হছে।

আলু ক্রেতা (পাইকার) অম্বিকা চন্দ্র রায় বলেন, গত বছর এই সময় আলু কিনেছি ৮-১০ টাকা কেজি। এ বছর আলু কিনছি ২২-২৩ টাকা কেজি। আমরা আলু কিনে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাঠাই। এবার আলু চাষিরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। এই এলাকায় আলু চাষ করে এত টাকা কৃষক কোন দিনও পায়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক জানান, আলু চাষিরা এ বছর লাভবান। যে জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছিল পরে বৃষ্টির কারণে সেই জমির আলু গাছের কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। কৃষি অফিস থেকে আলু চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় আলুর চাষ ছিল ২ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর তা বেড়ে ৩ হাজার ৩০৭ হেক্টরে পৌঁছিয়েছে। আলুর ফলন একটু কমলেও দামে লাভবান হচ্ছে কৃষক।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন