পেঁপের কেজি ৮০ টাকা!

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সপ্তাহ ব্যবধানে আবারও চড়া নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়ে গেছে শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যেরই। এর মধ্যে পেঁপের কেজি গিয়ে ঠেকেছে ৮০ টাকা!
শুক্রবার (৩ মে) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বিক্রেতারা জানান, তীব্র গরমে দাম বেড়ে গেছে প্রায় সব নিত্যপণ্যেরই। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সোনালি মুরগি, পেঁপে ও কাঁচা মরিচের দাম। এতে কমেছে বেচাবিক্রিও।
বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ৬০-৮০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, বরবটি ৪০-৫০ টাকা ও কহি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ধুন্দল ৬০ টাকা, লতি ৫০ টাকা, আলু ৫০-৫৫ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম চড়েছে পেঁপে ও কাঁচা মরিচের। প্রতিকেজি পেঁপে ৮০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা ও পালংশাক ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, তীব্র গরমে ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে সবজি। পাশাপাশি সেচ বাবদ বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। এর প্রভাবে গ্রাম পর্যায়ে সবজির দাম বাড়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতেও বেড়ে গেছে দাম।
পেঁপের দাম প্রসঙ্গে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন,
প্রতিবছর এই সময়ে দাম বাড়ে পেঁপের। তবে এবার গরমের কারণে দাম একটু বেশিই চড়া। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
আর ফয়সাল নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় পেঁপের উৎপাদন কম হয়েছে। তাই সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় দাম বেড়েছে। তবে কোরবানির আগে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে।
ক্রেতাদের দাবি, গরমকে পুঁজি করে শাক-সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যাতে পকেট কাটছে ভোক্তার।
মুক্তার হোসনে নামে এক ক্রেতা বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়তি। তবে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া, কিছু করার নেই। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ভোক্তারা।
বাজারে মাংসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ব্রয়লার ছাড়া বেড়ে গেছে সব ধরনের মুরগির দাম। কেজিতে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৯০-৪০০ টাকা, লাল লেয়ার ৩২০-৩৩০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭২০ টাকায়। তবে কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকায়।
অন্যদিকে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।
গরমের উত্তাপ ছড়িয়েছে মাছের বাজারেও। বেশিরভাগ চাষের ও দেশি মাছের দামই চড়া। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে।
বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০-২৩০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২২০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫৫০ টাকা ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। আর আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি দেশি কৈ ১৩০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা, শিং ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা।
কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আমিনুল বলেন, তীব্র গরমের কারণে বাজারে মাছ তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দামও কমছে না।
বাজারে দাম বেড়ে গেছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজেরও। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। আর কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ১৭০-১৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকায়। মানভেদে আদা কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পাইকারিতে বাড়তে শুরু করেছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম। তাই বাড়ছে খুচরা বাজারেও।
অপরিবর্তিত আছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম; প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আটার দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমে খোলা আটা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং দুই কেজির প্যাকেট আটা ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে কোরবানিকে কেন্দ্র করে এখনই দাম বাড়তে শুরু করেছে মসলার। প্রতি কেজি এলাচ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকা, দারুচিনি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, গোলমরিচ ৮০০ টাকা ও জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
নিত্যপণ্যের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং হচ্ছে না। এতে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।
আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।