প্রাণিপ্রেমিদের জলাতঙ্কের টিকা নিতেও হবে, দিতে হবে প্রাণিকে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক: কুকুরের কামড়ে সম্প্রতি এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুকুর-বিড়ালের আক্রমণের পর টিকা গ্রহিতার সংখ্যা বাড়ছে দিনদিন। অনেকে কুকুর-বিড়াল নিধনের দাবি তুললেও প্রাণিপ্রেমিরা বলছেন, ব্যতিক্রম কিছু ঘটনা ছাড়া নিজে আক্রান্ত না হলে, কোনো প্রাণি আক্রমণাত্মক হয় না। তাই নিধন নয়, নিয়ন্ত্রণ করে মানুষ ও প্রাণির সম্পর্ক অটুট রাখতে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের।
ইতিহাস বলে প্রাণিদের মধ্যে মানুষের সঙ্গে প্রথম বন্ধুত্ব হয় কুকুরের। মানুষের বন্ধুতায় মুগ্ধ হয়ে বনের কুকুর আর কখনোই ফিরে যায়নি বনে। কখনো নিখাঁদ বিনোদন, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হিসেবে আবার কখনো শিকারের প্রয়োজনে মানুষ এসব প্রাণি ব্যবহার করে আসছে যুগ যুগ ধরে। সময়ের পরিক্রমায় মানুষের আদি অকৃত্রিম বন্ধু কুকুরের সঙ্গে তৈরি হচ্ছে কি বৈরিতা?
গত ১৯ মে ফজরের নামাজের উদ্দেশে ঘর থেকে বেরিয়ে একদল কুকুরের হামালার শিকার হন ময়মনসিংহের নান্দাইলের যুবক ইজাজুল। ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় নির্মম মৃত্যু হয় তার। মর্মান্তিক এমন দুর্ঘটনার হার খুব বেশি না হলেও প্রতিদিনই ঘটছে নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যার প্রমাণ মেলে রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালের টিকা নিতে আসা দীর্ঘ লাইনের দৃশ্য। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে জলাতঙ্কের টিকা গ্রহণ করছেন অনেকে।
হাসপাতালটির পরিসংখ্যান বলছে, প্রাণির কামড়ে টিকাগ্রহিতার সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বাড়লেও, বিদায়ী বছরে কুকুরের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল কিছুটা কম। তবে চলতি বছরে এসে সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে টিকা গ্রহণ করেছেন ৪২ হাজার ৮১০ জন। যাদের মধ্যে ২৩ হাজারের বেশি টিকা নিয়েছেন গৃহপালিত বিড়ালের কামড় কিংবা আঁচড়ে।
মহাখালীর সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২২ সালে মোট টিকা গ্রহিতার সংখ্যা ছিল ৮৯ হাজার ৯২৮ জন। তারমধ্যে কুকুরের কামড়ের টিকা নিয়েছে ৫৪ হাজার ৮৬৭ জন, বিড়াল ও অন্যান্য পশুর কামড়ের টিকা নিয়েছে ৩৫ হাজার ৬১ জন।
২০২৩ সালে মোট টিকা গ্রহিতার সংখ্যা ছিল ৯৪ হাজার ৩৮০ জন। তারমধ্যে কুকুরের কামড়ের টিকা নিয়েছে ৫১ হাজার ৩৪৮ জন, বিড়াল ও অন্যান্য পশু প্রাণির কামড়ের টিকা নিয়েছে ৪৩ হাজার ৩২ জন।
২০২৪ সালে মোট টিকা গ্রহিতার ে৪২ হাজার ৮১০ জন। তারমধ্যে কুকুরের কামড়ের টিকা নিয়েছে ১৯ হাজার ৭১১। বিড়ালের কামড় বা আঁচরের টিকা নিয়েছে ২৩ হাজার ৩৯ জন।
মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাসার বলেন, মানুষকে পশু-প্রাণির কামড়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ হচ্ছে বিড়ালের কামড়ের সংখ্যা।
কিছু ব্যতিক্রম ঘটনা ছাড়া আক্রান্ত না হলে কুকুর-বিড়াল কখনোই মানুষের ওপর হামলে পড়ে না উল্লেখ করে প্রাণিপ্রেমি অধিকারকর্মী রাকিবুল হক এমিল বলেন, প্রাণি ও মানুষের মধ্যকার আচরণগত বিষয়ে জানার আছে আরও অনেক কিছুই।
কুকুরের পাশাপাশি বিড়ালকেও জলাতঙ্ক টিকার আওতায় আনার দাবি উঠলেও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান বাস্তবতায় নেই সেই সুযোগ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, যারা কুকুর-বিড়াল লালন পালন করছেন তারা এটি করতে পারেন, তবে প্রাণিদের টিকা দিতে হবে জলাতঙ্কের। আর নিজেদেরও নিতে হবে। সচেতন হতে হবে এ বিষয়ে। নির্দিষ্ট সময় পরপর গৃহপালিত ও বেওয়ারিশ কুকরকে জলাতঙ্কের টিকার আওতায় আনার পরামর্শ এ বিশেষজ্ঞর।