রাজশাহীতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘড়ছাড়া বিএনপি-জামায়াত নেতারা

আব্দুল বাতেন : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজশাহী বিভাগে বেশ কয়েকটি স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কয়েকটি মামলা করেছে ক্ষমতাশীন দলের নেতারাও।
এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া বেশীর ভাগ নেতাকর্মী। তবে বিএনপি-জামায়াত নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতার সাথে জড়িত নয় দাবি করলেও আইন শৃংখলার সদস্যরা বলছেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা সবাই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত ১০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এ সব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ১৪৮ জন। অজ্ঞাত অনেক আসামী রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০৬ জনকে। যাদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। যাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে। গ্রেপ্তার অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক বিজয় বসাক জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতার ঘটনায় বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন থানায় সোমবার পর্যন্ত ৭০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ৯৭০ জন। আর গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ৩৬৩ জন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও অনেক আসামি রয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার অনেক নেতাকর্মী ঘরছাড়া হয়েছেন। ঘরছাড়া নেতাকর্মীরা নিজেদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখছেন। নিজ পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজন মত যোগাযোগও করতে পারছেন না। সুযোগ বুঝে কেউ বাসায় এসে মাঝে মধ্যে কোন রকম দেখা সাক্ষাৎ করে চলে যাচ্ছেন। এসব নিয়ে নিজ পরিবারের সদস্য ও সন্তানরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে গোদাগাড়ীতে কোন আন্দোলন বা সহিংসতা হয়নি। গোদাগাড়ীর পরিবেশ শান্ত ছিল। কিন্ত কোটা আন্দোলনের সহিংসতা ইস্যুকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের তালিকা করে অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে মামলার আসামী দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী পরিবার পরিজন ছেড়ে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারা দেশে যে সহিংসতা হয়ে তার সাথে জামায়াত-শিবির জড়িত নয় বলে দাবি করে রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়াতের সহ-সেক্রেটারী ড. মোহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ বলেন, কোটা আন্দোলন ইস্যুকে কেন্দ্র করে জেলায় প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকে ঘরছাড়া হয়েছে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে পুলিশ জামায়াতের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি করছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ড. মোহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ বলেন, বহুদিন থেকেই তো এসব বলে আসছেন; এটা নতুন কিছু না। তবে সংবিধানে লেখা আছে প্রত্যেক নাগরিক দেশে নিজ নিজ ধর্ম ও রাজনীতি স্বাধীন ভাবে পালন করতে পারবে। ইসলামেও স্বাধীন ভাবে নিজ ধর্ম ও রাজনীতি করার কথা উল্লেখ রয়েছে; এটা হলো প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের কোন কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করছে। তারা নিজেদের বাড়ীতে থাকতে পারছে না।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ আলী ইশা বলেন, গত ১৯ জুলাই বিএনপির শান্তিপুর্ন কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে। কিন্তু উল্টো আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা পুলিশের গাড়িতে হামলা করেছে আর মামলার আসামী করা হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। এভাবে বিএনপির নেতাকর্মী মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে বিএনপির শতাধীক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
র্যাব-৫ -এর অধিনায়ক ফিরোজ কবীর জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজশাহীতে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবির সরাসরি জড়িত। এ সব ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যে সেটি জানা গেছে। আমরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে ৫০ জনের বেশী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছি। এদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ছাড়াও ভাড়াটে কিছু সন্ত্রাসীও রয়েছে। যাদের বিএনপি-জামায়াতের ভাড়াটে হিসেবে সহিংসতা করেছে।