পানির সংকটে পাট জাগ দেয়া নিয়ে বিপাকে রাজশাহীর কৃষক

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৪; সময়: ৩:২৯ pm | 
খবর > রাজশাহী

সরকার দুলাল মাহবুব : প্রলম্বিত খরার কবলে রাজশাহী। বৃষ্টির পানি না হওয়ায় কৃষিতে দেখা দিয়েছে অশনি সংকেত। ফসল রোপন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি পরিপক্ক পাট জাগের অভাবে কাটতে পারছে না চাষিরা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলার এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে পাট চাষ হয়েছে। জেলায় এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৮৬০ হেক্টর (এক লাখ ৪৭ হাজার ৭৫৮ বিঘা) জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

এবারে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাটের আবাদ ছিল ১৭ হাজার ৮৫ হেক্টর (এক লাখ ২৭ হাজার ১১২ বিঘা)। আঁশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় সাড়ে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। রাজশাহী জেলায় বেশী পাট উৎপাদন হয় বাঘা উপজেলায়, এরপর চারঘাট এবং পুঠিয়া উপজেলায়।

একদিকে পাটের আবাদ কম এবং অন্যদিকে পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় এ বিড়ম্বনার তৈরি হয়েছে। তবে কিছু সময় হালকা বৃষ্টি হলেও তা পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত না এবং ডোবা-নালা, খাল-বিলে জমেনি। ফলে পাটের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে উপজেলায় অধিকাংশ খাল-বিল, ডোবা এবং জলাশয়ে তেমন কোনো পানি নেই। জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় বয়ে চলা নদীগুলোতেও পর্যাপ্ত পানি নেই। আবার যেটুকু পানি আছে তা দিয়ে নদী সংলগ্ন কৃষকেরা পাট জাগ দিতে পারলেও দূরের কৃষকরা পাঠ জাগ দিতে পারছে না।

পবা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার থেকে কিছুটা কম আবাদ হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভূগছেন চাষিরা। এ বছর পাটের ফলন ভালো হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন কৃষকেরা।

চাষিদের অনেকেই বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমির পাশে, কেউবা রাস্তায় পাশে অথবা খাল-বিল বা ডোবার পাশে স্তূপ করে রেখে দিয়েছেন। তবে অধিকাংশ চাষিকেই ডোবা কিংবা জলাশয়ে পাট জাগ দিয়ে পচানোর জন্য শ্যালোইঞ্জিন দিয়ে পানি দিতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার উপজেলার পারিলা ইউনিয়নে দেখা হয় পাট চাষি নুর ইসলামের সাথে। তিনি জানান, তার জমি ইউনিয়নের মাহেন্দ্র বিলে। কিন্তু পাট কেটে তাকে জাগ দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে হচ্ছে ৮ কিলোমিটার দুরে তেবাড়িয়া বিলে। এতে অনেক খরচ হচ্ছে। পাট বেচে খরচ উঠবে না বলে জানান তিনি।

নওহাটা পৌরসভার তেঘর গ্রামের এক কৃষক জানান, ২ বিঘা জমিতে পাট রয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। অন্য কোথাও পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। যেখানে জাগ দেওয়া হয় সে জায়গাতে পানি না থাকায় পাট নিয়ে মহা সমস্যায় রয়েছি আমরা। পানি না পেয়ে জমির পাট কাটার সাহস পাচ্ছি না।

শীঘ্রই বৃষ্টি না হলে এবং পাট জাগ দিতে হলে পানি কিনে ডোবায় নিয়ে তারপর জাগ দিতে হবে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেশী হবে। এমনকি লোকসানও হতে পারে। তিনি জানান, অন্যান্য বছর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকায় ক্ষেতের পাশে রাস্তার ধারেই পাট জাগ দিতাম। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না থাকায় এই উপজেলার সব কৃষকই পাট নিয়ে বিপদে রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সালমা জানান, এখনও ভরপুর পাট কাটা শুরু হয়নি। জেলায় পাটের আবাদ ভাল হয়েছে। চাষিরা রিবন পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছড়িয়ে কম পানিতে অল্প জায়গাতে বেশী জাগ দিতে পারবেন। পাশাপাশি রিবন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিয়ে আঁশ ভাল পাওয়া যায় এবং দামেও বৃদ্ধি পায়। সবমিলিয়ে এবারো পাটের উৎপাদন ভাল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন