কচুয়ায় ২০ বছর ধরে হস্তশিল্পের পন্য বিক্রি করে সংসার চলে অনিমা রানী সরকারের

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৪; সময়: ৫:৪৭ pm | 
খবর > আঞ্চলিক

মাসুদ রানা, কচুয়া (চাঁদপুর) : অনিমা রানী সরকার, বয়স প্রায় ৩৮ বছর। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বাঁশের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তার স্বামী পরীক্ষিত সরকার কর্মহীন হওয়ায় সংসার চালানো যেন কষ্টসাধ্য। চার মেয়ে ও স্বামী নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ে পিপাসাকে বিয়ে দেন কোনোমতে।

সংসারের হাল ধরতে এখনো হস্তশিল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করে চলে তার সংসার। জীবিন জীবিকার তাগিদে অনেকেই নানা ধরনের পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন, কিন্তু অনিমা রানী সরকার ২০ বছর ধরে পরিবার ও সন্তানদের হাল ধরতে বেঁচে নিয়েছেন এ পেশা। তিনি যে সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করেন এতে তার মাসে উপার্জন হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। যা পরিবার ও সংসারের খরচ মেটানো সম্ভব নয়। বলছি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার দোয়াটি গ্রামের সরকার বাড়ির পরীক্ষিত সরকারের স্ত্রী অনিমা রানী সরকারের কথা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ দিয়ে নিজ বাড়ির উঠানে প্রতিদিন এভাবে তৈরি করেন নানান সামগ্রী। বিশেষ করে তিনি খাঁচা,ডুলা,ছাঁই,চালুন,কুলা,ধান রাখার ডোল,ছালুনী সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন। অনিমা রানী সরকার এক কুড়ি খাঁচা বিক্রি করেন ২ হাজার টাকা,এক কুড়ি ডুলা ১ হাজার,চালনী ১ হাজার ৫শ টাকা ও এক কুড়ি কুলা বিক্রি করেন ২ হাজার ৫শ টাকা। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে এ হস্তশিল্প। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন এ পরিবারটি। যে সামান্য তার যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনো মতে এক মেয়েকে বিয়ে দিলেও বাকী ৩জন মেয়ে এখনো পড়াশুনা করছেন। এদিকে মায়ের সঙ্গে বসে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় বাঁশ-বেতের সমন্বয়ে জিনিসপত্র তৈরি করতে সহযোগিতা করছেন মেয়েরাও। বর্তমানে তার আরেকটি মেয়ে পূজা সরকার পাশ্ববর্তী ভূঁইয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশুনা করেন। পড়াশুনার পাশাপাশি তার মাকে কাজে সহযোগিতা করেন তারা।

অনিমা রানী সরকারের বোন অনিতা রানী বলেন, আমার বোন অনেক কষ্ট করে মেয়েদের পড়াশুনা করাচ্ছেন। হাতের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চলে। তবে আমরাও মাঝে মধ্যে তাকে সহায়তা করলে এখন সে কষ্টে দিনাপাত করছেন। তার ব্যবসাকে আরো সমৃদ্ধি ও এ শিল্পের মাধ্যমে পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

হস্তশিল্প কারিগর অনিমা রানী সরকার জানান, দীর্ঘ ২০ বছর বাঁশের মাধ্যমে নানা জিনিসপত্র তৈরি করছেন। স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়ায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছে আমাকে। ৪জন কন্যা সন্তানকে নিয়ে পরিবার চালাতে পড়েছি বিপাকে। যে টাকা উপার্জন হয় তাতে কোনো রকম সংসার চললেও মেয়েদের পড়াশুনা খরচ চালানো সম্ভব নয়। তাই এ ব্যবসাকে আরো বৃদ্ধি ও সংসারের হাল ধরতে উপজেলা প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য পরিমল সরকার বলেন, অনিমা রানী একজন গরীব ও অসহায় মানুষ। হাতের মাধ্যমে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে ৬ সদস্যের পরিবারের সংসার চালান তিনি। বর্তমানে হস্তশিল্প তেমন একটা না চললেও তার পরিবারটিকে টিকে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করলে হয়তো তার ব্যবসাটি আরো বৃদ্ধি পাবে।

উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা(আপা) রুবাইয়ারা খাতুন বলেন, অনিমা রানীকে উদ্যোক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে আরো প্রশিক্ষন দেয়া ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি তার পন্যগুলো আমাদের অনলাইনের ওয়বেসাইটের মাধ্যমে বাজারজাত করা হবে এতে করে অনেক পন্য বিক্রি হলে তিনি সাবলম্বী হবেন।

 

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন