কচুয়ায় ১৭ বছর ধরে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সহদেব চন্দ্র দাস

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪; সময়: ১১:১৯ am | 
খবর > আঞ্চলিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, কচুয়া : চাঁদপুরের কচুয়ায় বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সহদেব চন্দ্র দাস ও তার পরিবার। বাপ-দাদার পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন তিনি। সহদেব চন্দ্র দাস কচুয়া শাহ নেয়ামত শাহ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় একটি দোকানে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বাদ্যযন্ত্র তৈরি জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার গ্রামের মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার চান্দইর ঘরপাড়া গ্রামে।

জানা যায়, কয়েক বছর আগে তবলার বেচা-বিক্রি ছিল বেশি। তখন প্রতিদিনই কাজের অর্ডার থাকত। অর্ডার দিয়ে বাদ্যযন্ত্র কিনতেন ক্রেতারা। কিন্তু বর্তমান যুগে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের অধিকাংশই মুখ থুবড়ে পড়েছে ইলেক্ট্রনিক বাদ্যযন্ত্রের কাছে। যার ফলে এই শিল্প অনেক কমে গেছে। তাই জীবিকা নির্বাহের জন্য অনেক কারিগর বেছে নিয়েছে অন্য পেশা।

এক সময় এলাকার বিভিন্ন স্থানে যাত্রাপালা, লোকসঙ্গীত, নাট্য ও পালাগান ছিল বাংলার ঐতিহ্য। এসব অনুষ্ঠানকে মনোমুগ্ধকর করে তুলতে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তবলা, ঢোল, মৃদঙ্গ, ঢোলক, ডাক, তবল বায়ার মতো দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলো শোভা পেত বাংলার গ্রামান্তরে।

কিন্তু আধুনিক আর ইলেক্ট্রনিক বাদ্যযন্ত্রের প্রভাবে দেশীয় এসব বাদ্যযন্ত্র ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসলেও হার মানতে নারাজ সহদেব চন্দ্র দাসের। এসব দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ করছেন তিনি। সঙ্গে রাখেছেন বাবাকে। এতেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা।

সহদেব চন্দ্র দাসের দোকানে বিভিন্ন ধরনের চামড়ার বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হয়। প্রতি মৃদঙ্গ ৩ হাজার ৫শ টাকা, ডাক ৯-১০ হাজার টাকা, ঢোল ৬ হাজার, তবলা ৪ হাজার ও তবলা বায়া ৩ হাজার ৬শ টাকায় বিক্রি করা হয়। এসব তৈরিতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত। কিন্তু পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়।

বাদ্যযন্ত্র কারিগর সহদেব চন্দ্র দাস বলেন, বাপ-দাদাদের আমলে এ পেশা ছিল খুবই জনপ্রিয়। এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো অনুষ্ঠান হলে এসব যন্ত্রের প্রচলন ছিল বেশি। বর্তমানে অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় এবং আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কারনে কমে যাচ্ছে হাতের তৈরি এসব বাদ্যযন্ত্র। পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করছি।

সহদেব চন্দ্র দাসের বাবা রাখাল চন্দ্র দাস বলেন, আমি অনেক বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। আমাদের পুরো পরিবার মানিকগঞ্জে এ কাজ করছেন। আমার ছেলে সহদেব চন্দ্র দাস কচুয়ায় প্রায় ১৭ বছর ধরে বাদ্যযন্ত্র তৈরি বিক্রি করছেন।

পাশাপাশি আমিও তার কাজে সহযোগিতা করি। তবে এখন আর আগের মতো হাতের তৈরি বাদ্যযন্ত্র চলে না। দিনদিন কমে যাচ্ছে এসব যন্ত্র। তাই দেশীয় বাদ্যযন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

 

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন