বাগমারায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর ইটভাটা জবরদখলের অভিযোগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৪; সময়: ৬:১০ pm | 
খবর > রাজশাহী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারার এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতার স্ত্রীর ইটভাটা দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও ইটভাটাটি দখলমুক্ত করতে পারছেন না। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসানের আশঙ্কা করার পাশাপাশি ও ইটভাটা চালু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী।

তবে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেকে বিএনপির কর্মীর দাবী করে বলেন, প্রভাব খাটিয়ে তাঁর কাছ থেকে আট বছরের জন্য চুক্তির মাধ্যমে ইটভাটাটি ইট তৈরি ও পোড়ানোর জন্য সামান্য দামে আওয়ামী লীগের নেতার স্ত্রী ইজারা নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি তা দখলে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের নেতা আবু জাফর মাস্টার গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে আত্নগোপনে রয়েছেন। তিনি রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য। তাঁর বাড়ি ওই এলাকার শিবজাইট গ্রামে। অভিযুক্ত বিএনপি কর্মীর নাম আবদুল কাদের। তিনি উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের আরঙ্গবাদ গ্রামের মৃত ভুরশি মণ্ডলের ছেলে।

আওয়ামী লীগের নেতা আবু জাফরের স্ত্রী রেজিয়া খাতুন জানান, তিনি গত ২০২০ সালের ২১ আগস্ট চুক্তিনামার মাধ্যমে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের আরঙ্গবাদ এলাকায় অবস্থিত ‘এ কে ব্রিকস’ নামের ইটভাটাটি আট বছরের জন্য ইজারা গ্রহণ করি। সাত লাখ টাকায় শুধু মাত্র এক একর চুয়ান্ন শতক জায়গা জুড়ে স্থাপন করা ইটভাটাটি ইজারা নেওয়া হয়, বিএনপির কর্মী আবদুল কাদেরের কাছ থেকে। তবে ওই স্থানের আশপাশে ইট প্রস্তুত করার জন্য যে পরিমাণ জমির প্রয়োজন হবে তা আলাদা ভাবে ইজারা নিতে হবে রেজিয়া খাতুনকে। এমন ১৪ জন জমির মালিকের কাছ থেকে আলাদা মূল্য দিয়ে ইজারা নেন তিনি। তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতার স্ত্রী ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধ করে ইটভাটাটি পরিচালনা করে আসছিলেন। স্থানীয় আয়কর অফিসও বিষয়টি নিশ্চত করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতার স্ত্রীর নামে ইটভাটা থাকলেও পরিচালনা ও দেখভাল করেন স্বামী আবু জাফর মাস্টার।

এদিকে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবু জাফর আত্নগোপনে চলে যান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিনেই আবদুল কাদের ইটভাটার দখল নেন। ওইদিন তিনি রেজিয়া খাতুনের নিয়োগ দেওয়া শ্রমিকদের তাড়িয়ে দখলে নিয়েছেন ইটভাটাটি। এখন পর্যন্ত তাঁর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

কয়েক দফা সমঝোতার মাধ্যমে ইটভাটা দখলমুক্তের চেষ্টা করেও পেরে ওঠেননি। আওয়ামী লীগের নেতা জানান, আবদুল কাদেরের বাড়ির পাশেই ইটভাটা। এছাড়াও তিনি প্রভাবশালী। এদিকে বেদখল হওয়া ইটভাটাটি রেজিয়া খাতুন সম্প্রতি আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ইজারা দেন। তিনিও ইটভাটা দখলে নিতে পারেননি। তাঁর লোকজনদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ইটভাটায় বিক্রির উপযোগী বিভিন্ন মানের প্রায় ছয় লাখ ইট রয়েছে। এছাড়াও প্রায় মাটি, সমিল,ইট তৈরির উপকরণসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল রয়েছে। সবগুলো দখলে নিয়েছেন তিনি। ইটভাটা বেদখল হওয়ার কারণে এবার নতুন করে ভাটা চালু করাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানান রেজিয়া খাতুন। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে ইটভাটার পাশে পোড়ানো ইটের স্তুপ ও মাটি দেখা যায়। তবে কোন শ্রমিকদের দেখা যায়নি। এসব বিষয়ে গতকাল সোমবার কথা হয় আবদুল কাদেরের সঙ্গে।

তিনি নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবী করে বলেন, ইটভাটাটি এক সময় তাঁরই ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনদের দিয়ে দুই বার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করানো হয়েছে। জরিমানা ছাড়াও অভিযানে ভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই সুযোগে আওয়ামী লীগের নেতা আবু জাফর মাস্টার ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রভাব বিস্তার করে মাত্র সাত লাখ টাকায় আট বছরের জন্য ইজারা নিয়েছিলেন। পট পরিবর্তনের পর তিনি তা দখলে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। ওই চুক্তিপত্রে দলিলের সাক্ষী আবদুর রশিদ, ইউনুছ আলী, ফজলুর রহমান জানান, তাঁদের উপস্থিতিতে ওই সময় ভাটার ইজারার টাকা লেনদেন হয়েছে। উভয় পক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তবে ভয়ভীতির বিষয়টি তাঁরা আঁচ করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।

গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ইটভাটাটি আবদুল কাদেরের ছিল, পরে আওয়ামী লীগ নেতা জাফর মাস্টার নিয়েছিলেন বলে জেনেছেন। আবদুল কাদেরের দলীয় পরিচয় বিষয়ে বলেন, “তিনি মূলত ব্যবসায়ী, যে দল যখন ক্ষমতায় তখন সেদিকে গড়েন তিনি। দলীয় পরিচয় দিয়ে দখল করলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এলাকার বাসিন্দা জেলা মৎস্যজীবী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন জানান, আবদুল কাদের বিএনপির কেউ নন, তিনি সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হকের অনুসারী। বিগত নির্বাচনগুলোতে তাঁর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। ইটভাটাটি তিনি অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন। দলের নাম ভাঙানোর কারণে বদনাম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থানায় নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন