৪ গ্রামের শান্তি ভাঙছে সন্ত্রাসী তাণ্ডব, আতঙ্কে পুরুষরা ঘরছাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঈশ্বরদী : পাবনার ঈশ্বরদী শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত লক্ষ্মীকুন্ডার চারটি গ্রাম- চরকুড়ুলিয়া, চরগড়গড়ি, চরকাতরা ও গাফুরিয়াতে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার মানুষের বসবাস। অধিকাংশ গ্রামবাসীই কৃষক। স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত এই মানুষগুলো বিগত কিছুদিন ধরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছু সশস্ত্র দুর্বৃত্ত নিয়মিতভাবে এই গ্রামগুলোর বসতবাড়ি, দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট এবং নিরীহ মানুষদের মারধর করছে।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তাদের মুখে শোনা যায় একেকটি ভীতিকর অভিজ্ঞতা। চরকুড়ুলিয়া, চরগড়গড়ি, চরকাতরা এবং গাফুরিয়ায় গৃহবধূ এবং শিশুদের মধ্যে ভয়ানক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, আর পুরুষরা নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। এই গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর চালিয়ে গরু, মহিষ ও অন্যান্য মালামাল লুটে নিচ্ছে।
গ্রামের ভেতরের রাস্তায় চলতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু বাড়ির বেড়া কাটা, টিনের চাল ছিঁদ্র হয়ে গেছে, এবং বেশ কিছু দোকান ভেঙা অবস্থায় রয়েছে। কিছু বাড়িতে মহিলারা ঘরের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে আছেন এবং বাইরে কোনো পুরুষ নেই।
গ্রামের শিশুদের মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। এক শিশুকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, “আমরা স্কুলে যেতে পারি না, কারণ তারা আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে স্কুলের পথে যেতে মানা করেছে।”
স্থানীয়দের মতে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর থেকেই এ ধরনের হামলার ঘটনা বেড়েছে। দুর্বৃত্তদের ভয়ে অধিকাংশ পুরুষই বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সুযোগে তাদের বাড়িঘর ও দোকানে হামলা চালিয়ে মহিলাদেরও নির্যাতন করা হচ্ছে।
এমনকি শিশুদেরও বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সামনে তাদের সমাপনী পরীক্ষা হলেও তারা ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। পরিবারগুলো দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবের কারণে আতঙ্কিত, আর প্রতিটি বাড়ি ও দোকানে হামলার ক্ষতচিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, কেরাত আলী প্রামাণিকের ছেলে ইয়াসিন প্রামানিকসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি এসব হামলা চালাচ্ছে।
আনছার মোড়ের এক দোকানদার জানান, “তাদের দোকানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসেন, এই কারণেই তাদের ওপর হামলা হয়েছে বলে তারা মনে করছেন। গত শুক্রবার আনুমানিক দেড়টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত আনছার মোড়ের একাধিক দোকানে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করে।”
গ্রামের বৃদ্ধা বিনা খাতুন ও মোসলিমা বেগম বলেন, “তাদের বাড়ির বেড়া কেটে হামলাকারীরা ক্ষতবিক্ষত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণেই এই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে মনে করেন তারা।”
ভুক্তভোগী ছানাউল্লাহর স্ত্রী বিনা খাতুন বলেন, “শুক্রবার দুপুরে মসজিদে নামাজের সময় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সশস্ত্র দল তাদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ওই সময় গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়ানোর পাশাপাশি গোয়ালঘর থেকে কয়েকটি গরু লুট করে নিয়ে যায়।”
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, “ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া উদ্ধার করা চারটি গরু মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।”