বাগমারায় ৫০ তালগাছ কীটনাশক দিয়ে মেরে ফেলায় আ.লীগ নেতাকে তলব

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩; সময়: ৮:৪১ pm | 
খবর > আইন-আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলার জন্য কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাহরিয়ার আলমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৫০ তালগাছে কীটনাশক’ শিরোনামে গত ৩১ জানুয়ারি বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংভাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। বাংলা ভাষায় আদেশ ঘোষণা করেন বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি, যা চলতি বছর ভাষার মাসের প্রথম দিনে প্রথম বাংলায় দেওয়া আদেশ।

আদেশে আদালত বলেন, খবরের উল্লেখিত ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সবুজ বনায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্যে অঙ্গীকারকে বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিচ্ছি।

৫০টি তালগাছ মেরে ফেলতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য কেন শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিবাদীদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

আদেশে আদালত বলেছেন, বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তা যৌথভাবে সরেজমিন তদন্ত করবেন। তাঁরা উল্লেখিত গাছগুলোর ছবিসহ প্রতিবেদন আগামী সাত দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করবেন।

প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদেশের কপি বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বরাবর পাঠাতে বলেছেন আদালত। আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে টেলিফোন ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পাঠাতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।

বিষয়টি বাগমারা ইউএনও এবং কৃষি কর্মকর্তাকে টেলিফোন ও তারবার্তার মাধ্যমে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, ১২ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি কার্যতালিকায় আসবে।

এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজা বেগম। তাঁর উদ্দেশে আদালত বলেছেন, আদেশের কপি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে ইউএনর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শাহরিয়ারের কাছে যেন পৌঁছে দেওয়া হয়।

উল্লেখিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক দশক আগে স্থানীয় এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন ব্যক্তি সড়কের উভয় পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তালবীজ লাগিয়েছিলেন। সেসব তালগাছ বড় হয়ে এখন ছায়া দিচ্ছে। একটি তালবীজ গাছ হয়ে উঠতেই সময় লাগে এক দশক বা যুগের বেশি।

ফলে বোঝা যায়, কী নিষ্ঠা ও ধৈর্য নিয়ে পরিচর্যা করে তালগাছগুলো বড় করে তুলেছেন বাইগাছার সেসব উদ্যোগী মানুষ। আর আমরা অবাক হলাম, সেই গাছগুলো মারতে বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। প্রকৃতি ও গাছের প্রতি কী রকম নির্দয় হলে এমন কাজ করা যায়, সেটিই প্রকাশ পায় এ ঘটনায়। শুনানিকালে আদালত বলেছেন, বিষয়টি খুব মর্মান্তিক। মানুষ কত নিষ্ঠুর হতে পারে!

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন