জামাই মেলায় বিশাল বিশাল মাছ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩; সময়: ২:৫৯ pm | 
খবর > আঞ্চলিক

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বগুড়ার গাবতলীতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্যাসী ও জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষ মেলায় এসে কেনাবেচা করেছেন। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নানা বিনোদন উপভোগ করেছেন। বিক্রি হয়েছে হরেক প্রজাতির বিশাল বিশাল মাছ ও মিষ্টিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস।

তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে এ মেলার প্রধান আকর্ষণ বাঘাইড় মাছ প্রকাশ্যে কেনাবেচা হয়নি।

বৃহস্পতিবার সেখানে ‘বউমেলা’ অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় শুধু নারী ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকবেন।

বুধবার দুপুরে বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পূর্বে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন মাঠে পোড়াদহ মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের ও ধর্মবর্ণের শত শত নারী-পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। মেলায় বাঘাইড় মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি না হলেও বড় বড় চিতল, ভেউস, বোয়াল, রুই, কাতলা, ব্লাক কার্প, সিলভার কার্পসহ নানা প্রজাতির মাছ তোলা হয়। কারো কাছে মাছের বাজার সস্তা আবার কারো কাছে চড়া মনে হয়েছে।

বজলুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী প্রায় ৪০ কেজি ওজনের ব্লাক কার্প মাছ এনেছিলেন। দাম প্রতি কেজি দুই হাজার টাকা হাঁকা হয়েছিল। পরে একক ক্রেতা না থাকায় মাছটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে।

স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে ২০০ বছরের পুরনো মেলায় ছিল প্রশাসনের কঠোর নজরদারি। মেলায় মাছ ছাড়াও হরেক রকম মিষ্টি বিক্রি হয়। ১৫ কেজি ওজনের ‘মাছ মিষ্টি’ বিক্রি হয় ৪০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া কাঠ ও স্টিলের আসবাবপত্র, বড়ই, কৃষি সামগ্রী, গোশত, হরেক রকম আচার, মিষ্টান্ন বিক্রি হয়েছে। শিশুদের খেলনা ছাড়াও চিত্ত বিনোদনের জন্য বিচিত্রা, সার্কাস, যাদু, নৌকা ও নাগরদোলা ছিল।

বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা নিষিদ্ধ থাকলেও মহিষাবান দেব উত্তরপাড়ার মৃত রমজান আলী সাকিদারের ছেলে শুকরা সাকিদার নামে ব্যবসায়ী চারটি বাঘাইড় মাছ এনেছিলেন। টের পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান আল ইমরানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে আটক ও মাছগুলো জব্দ করেন। পরে তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার পর মাছগুলো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মজিদের জিম্মায় দেওয়া হয়। জব্দ করা মাছের মূল্য দেড় লক্ষাধিক টাকা হবে।

স্থানীয় প্রবীণরা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রায় ২০০ বছর ধরে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন ইছামতি নদীর তীরে জমিতে সন্যাসী পূজা করে আসছেন। বাংলা সনের মাঘের শেষ বা ফাল্গুনের প্রথম বুধবার মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে।

মেলা ঘিরে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বাড়িতে মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনিরা এসে ভরে গেছেন। তাদের মেলার মাছ, গোশত, কাঁচা শাকসবজিসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি হরেক রকম পুলিপিঠাও রয়েছে। অনেক জামাই মেলা থেকে সাধ্যমতো মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন।

মেলায় আগত গাইবান্ধা সদরের কলেজ ছাত্র রাশেদ সুলতান জানান, তারা প্রতি বছরের মতো ৪-৫ বন্ধু পোড়াদহ মেলায় এসেছেন। দিনভর খাওয়া-দাওয়া শেষে বড় মাছ কিনে বাড়িতে ফিরবেন।

নাটোরের সিংড়া থেকে আগত ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান, তিনি ঈদে সম্ভব না হলেও পোড়াদহ মেলার আগে স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে এলাকার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। তিনি শ্বশুরবাড়ির জন্য ১৭ কেজি ওজনের বড় সিলভার কার্প মাছ কিনেছেন।

বগুড়া শহর থেকে আসা গণমাধ্যমকর্মী আলমগীর হোসেন, ব্যাংকার মিজানুর রহমান, এনজিও কর্মী সুজন সাকিদার প্রমুখ জানান, তারা প্রতিবছর পোড়াদহ মেলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। তারা বড় বড় মাছ, মিষ্টান্ন, হরেক রকম আচার দেখতে ও খেতে আসেন।

মেলা একদিনের হলেও এর আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। মেলাটি জন্মের পর থেকে মহিষাবান গ্রামের মণ্ডল পরিবার পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলার লাইসেন্স দেওয়া হয়। এবার মেলার নেতৃত্বে ছিলেন মণ্ডল পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মহিষাবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল।

আব্দুল মজিদ মণ্ডল জানান, প্রশাসনসহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে মেলা সম্পন্ন হয়েছে। একই মন্তব্য করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান-আল-ইমরান।

অপরদিকে পোড়াদহ মেলা শেষে বৃহস্পতিবার মহিষাবান ও রানিরপাড়া গ্রামে পৃথকভাবে ২টি বউমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই মেলায় পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় বিভিন্ন বয়সের নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করে থাকেন। প্রায় ২৩ বছর ধরে বউমেলা হয়ে আসছে। বউ মেলায় একটিতে সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ও অপরটিতে যুবলীগ নেতা সুলতান মাহমুদ মেম্বার।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন