বেলকুচিতে এমপির স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে আওয়ামীলীগ সেক্রেটারীর সাংবাদিক সম্মেলন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩; সময়: ৬:২৬ pm | 
খবর > আঞ্চলিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মমিন মন্ডলের বিরুদ্ধে একক স্বেচ্ছাচারিতা, দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ড ও জামাত-বিএনপি শিবিরদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরির প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বেগম আশানুর বিশ্বাস।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে এ সাংবাদিক সম্মেলনে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

আশানুর বিশ্বাস বলেন, দলীয় চেয়ারম্যান ও নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয়হীনতায় আওয়ামীলীগকে দূর্বল করে চলছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হবার পর থেকে মমিন মন্ডল দলের সাধারন সম্পাদক হিসেবে আমাকে দূরে রেখে হঠাৎ করে ঢাকা থেকে এসে হটকারী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ইউনিয়ন কমিটি পুর্নাঙ্গ করতে ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সাথেই সমন্বয় না করে একক সিদ্ধান্তে কমিটি অনুমোদন দিচ্ছেন। এসব বিষয়ে দলের নেতাকর্মীরা এরই মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ বরাবর অভিযোগও দায়ের করেছি।

আশানুর বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, বেলকুচির ৬ টি ইউনিয়নের ৫ টি ইউনিয়নের কমিটি গঠন করা হয়েছ। সকল বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও এখন এমপি মহদয় এখন সেখানে একক ভাবে তার মনোনিত ইউনিয়নের সভাপতি বা সাধারন সম্পাদক এক জনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করছে। এরই মধ্যে বেলকুচি সদর ইউনিয়নের সাধারণত সম্পাদক মির্জা মরিয়মকে বাদ রেখেই সবাপতিকে নিয়ে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করে পরিচিতি সভা করেছে। এছাড়াও দৌলতপুর ও বড়ধুল একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন দলে এমপির বলায় বাড়াতে তিনি কমিটিতে স্তান দিচ্ছে বিএনপি জামায়াতের কর্মীদের। এই আসনের এনায়েতপুরে তিনি সরকার উৎক্ষেত মামলার ৫ নং আসামী আলামীন কে থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এনেছেন। তিনি জানান, দলের কোন কর্মকান্ডে এমপি উপস্থিত থাকেন না। হঠাৎ করে কয়েকদিন পর পর এসে তার কিছু ভাড়াটিয়া লোক ননিয়ে চলাফেরা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রধান উপদেষ্টা গাজী সাইদুর রহমান, দলের নেতা লুৎফর রহমান মাখন, গাজী আব্দুল মালেক তালুকদার. মহাদেব চন্দ্র সাহা, এমদাদুল হক এমদাদ, ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সোলায়মান হোসেন, আছের উদ্দিন সহ দলের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, এমপি মমিন মন্ডলের বিতর্কিত কর্মকান্ডে বিষয়ে মুখ খুলেছেন চেয়ারম্যান গন। বেলকুচি সদর ইউনিয়নের চেয়রম্যান মির্জা সোলাইমান জানান, বর্তমান এমপি আমাদের কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা এমনকি সরকারী উন্নয়নের কোন বাজেট আামাকে দেয় না। তার মনোনিত লোক দিয়ে তিনি তার কাজ চালায়। সরকারে উন্নয়নের বড় একটি অংশ আমরা বাস্তবায়ন করি। বড়ধুলের চেয়ারম্যান আসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমরা দলের মোননিত চেয়ারম্যান অথচ এমপি আমাদের বাদ রেখে সকল কাজ করছে। আমরা কিছু বলতে গেলেও তিনি তা শোনেন না।

এদিকে দলের একক সিদ্ধান্তের বিষয়ে বেলকুচি সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মির্জা মরিয়ম বলেন, আমি দলের সাধারন সম্পাদক অথচ আমাকে বাদ দিয়ে আমার কমিটি পূর্নাঙ্গ করে পরিচিতি সভা করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকও জানেন না।

বড়ধুল ইউনিয়নের সাধারণত সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে দলের জন্য কাজ করছি। হামলা মামলার আসামী হয়েছি। আর আজ এমপি আমাদের বাদ দিয়ে বিএনপির লোকদের দিয়ে আজ আওয়ামীলীগকে পরিচালনা করে।

বেলকুচি পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মির্জা শরিফুল ইসলাম বলেন, এমপি ও দলের সাধারন সম্পাদকের মধ্যে সমন্বয় না হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা এর অবসান চাই। উপজেলা শ্রমীকলীগের সভাপতি সাহেব আলী জানান, দলের অঙ্গ সংগঠন ও সহোযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে এমপি কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। এমপি নিজের মত করে দল চালায়। আমরা নিরুপায়।

এদিকে এ বিষয়ে একাঠিক লিখিত অভিযোগ এসেছে বলে জানান সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড. কে এম হোসেন আলী হাসান।

তিনি বলেন, দলের যেকোন সিদ্ধান্ত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক সহ সকলকে নিয়ে নিতে হবে। দলের এমন বিভাজনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে দলের কোন্দল মিটানোর জন্য কাজ করছি। আশা করছি বেলকুচির বিষয়টি অচিরেই বসে ঠিক করা হবে। আগামী মাসের মধ্যেই এর অবসান করা হবে। অন্যথায় কেন্দ্রীয় আওয়ামিলীগের সহযোগীতা নেওয়া হবে দন্দ নিরসন করতে। এরই মধ্যে এবিষয়ে আমরা তাদের লিখিত চিঠি দিয়েছে।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্য আলহাজ আব্দুল মমিন মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

তবে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী সেলিম সরকার বলেন, এমপি মহদয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের সাথে বার বার বৈঠক করে ৫টি ইউনিয়নের কমিটি অনুমোদন করেছে। এখানে তাদের কোন কথা থাকলে এমপি মহদয়ের সাথে আবার বৈঠক করতে পারে অথবা দলের উর্ধতন নেতাদের বলতে পারে। তবে এমপির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন