জ্বালানি সংকটে ‘পঙ্গু’ পাকিস্তান

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও খারাপ হচ্ছে পাকিস্তানে। বৈদিশিক মুদ্রা কম থাকায় ভয়াবহ সংকট চলছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসেও। জ্বালানি সংকটে পাকিস্তান অনেকটা ‘পঙ্গু’ হয়ে পড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এশিয়ান লাইট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণত পাকিস্তান থেকে জ্বালানি আফগানিস্তানে পাচার করা হয়। এমন সংকটের মধ্যে প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য সমৃদ্ধ হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে তৈরি করা খারাপ বৈদেশিক নীতির কারণেই পাকিস্তান এমন অবস্থায় পড়েছে। ইউক্রেনের সংঘাত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেল আমদানিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিস্তান।
প্রতিবেদনে এশিয়ান লাইট বলেছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমারা প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যেও রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছাড় আদায় করে নিয়েছে সৌদি আরব, ভারত ও তুরস্ক। তবে সেটি আদায় করতে পারেনি সংকটে থাকা পাকিস্তান। এসব দেশ বৈদেশিক নীতির কারণে এমনটি করতে সক্ষম হয়েছে।
পাকিস্তানে একটি বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। বেশিরভাগ জ্বালানি শক্তি আমদানি করে দেশটি। আগে থেকেই ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুব বেশি বড় নয়। এটি তারা বাড়ানোর চেষ্টা করেনি। ইরান বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। দুই দেশের মধ্যে বড় সীমান্ত থাকলেও পাকিস্তান ইরানের সম্পর্ক তলানিতেই রয়ে গেছে।
এই বিষয়টি পাকিস্তানের বর্তমান সরকার সংশোধনের চেষ্টা করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সাম্প্রতিক ইরান সফরে উভয় পক্ষ বিনিময় বাণিজ্য এবং সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণের বাজার চালু করার বিষয়ে আলোচনা করেছিল। দুই দেশের মধ্যে কিছু জ্বালানি প্রকল্প নিয়ে আগে থেকেই ঝামেলা চলছে। প্রকল্প বাস্তাবায়ন না করায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় অংকের মামলা করতে পারে ইরান।
সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানের বর্তমান জ্বালানি পরিস্থিতি অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়ে গেছে। শিগগিরই এর উন্নতির সম্ভাবনা নেই।
এদিকে পাকিস্তান তার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির ব্যাপক দরপতনে পাকিস্তানিদের জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য পাকিস্তান সরকার গত নভেম্বর থেকে মূলত স্থগিত সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচি চালু করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
সাধারণত পাকিস্তানের প্রায় এক চতুর্থাংশ জনসংখ্যা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। অর্থনৈতিক মহাসংকটে অনেকেই তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে সংগ্রাম করছে। ১ মার্চ পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরো দ্বারা প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি ৩১.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটি ১৯৭৪ সালের পর সর্বোচ্চ।
স্থানীয় ব্রোকারেজ ফার্ম ইসমাইল ইকবাল সিকিউরিটিজের গবেষণা প্রধান ফাহাদ রউফ বলেন, ‘এটি এখনও সর্বোচ্চ নয়। সামনে দাম আরও বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রমজানে খাবারের দাম আরও বাড়বে।’