আপিলেই আটকা সাত খুন মামলা

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৩; সময়: ১:৫৭ pm | 
খবর > আইন-আদালত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নয় বছরেও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার বিচার শেষ হয়নি। ঘটনার ৫২ মাসে বিচারের দুটি ধাপ অতিক্রম করলেও গত সাড়ে ৪ বছর ধরে আপিল বিভাগে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে মামলাটি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আপিলের আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হলে শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এদিকে সম্প্রতি নিহতের স্বজনরা মানববন্ধন করে দ্রুত রায় কার্যকর করার জোরালো দাবি জানান। পূর্বের রায় বহাল রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির দাবি জানানো হয়। গত ৯ বছরে আলোচিত এই মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়াকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করে খুন করা হয়। যাদের লাশ পরে ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে র‌্যাব-১১ এর কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। পরে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি এই মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এছাড়া নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেওয়া হয়।

জানা যায়, এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে আদালত ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। পরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানা। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তারা এ আপিল করেন।

এদিকে আলোচিত এ মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার দাবিতে ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন হয়। নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্য এবং নিহত সাতজনের পরিবারের সদস্যদের ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত স্বজনরা হাইকোর্টের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আপিল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করেন। একই সঙ্গে তারা সাজার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে কী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা সারা দেশের মানুষ জানেন। নূর হোসেন, র‌্যাব কর্মকর্তাসহ অন্য আসামিদের যদি দ্রুত শাস্তির আওতায় না আনা হয়, তাহলে বিচার বিভাগের প্রতি সারা দেশের মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে। বিচার হলে আইন ও আদালতের প্রতি মানুষ আস্থাশীল হবেন।

গত ৯ বছরে আলোচিত এ মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়াকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেন, আইনের শাসন বাস্তবায়নে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করতে হবে। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

এদিকে মামলাসংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা যুগান্তরকে জানান, আপিল বিভাগেই হবে এই মামলার চূড়ান্ত বিচার। আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকলে সত্যায়িত কপি যাবে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে। এ ক্ষেত্রে আসামিরা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন না করলে রায় কার্যকরের জন্য বিচারিক আদালত অনুলিপি কারাগারে পাঠাবেন। পরে কারা কর্তৃপক্ষ জেলকোড অনুযায়ী রায় কার্যকর করবে। তবে কারাবিধি অনুযায়ী আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ পাবেন।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন