এক নজরে রাজশাহী ও সিলেট সিটি ভোট

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩; সময়: ১:২৮ pm | 
খবর > নির্বাচন

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটির ভোট শেষ করতে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর, খুলনা ও বরিশালের পর শেষ ধাপে বুধবার ভোট হচ্ছে সিলেট ও রাজশাহী সিটিতে।

আগের তিনটির মত এ দুই সিটি নির্বাচনেও ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-এভিএমে। কেন্দ্রে ভোট পরিস্থিতি এবারও সিসি ক্যামেরায় দেখবে কমিশন।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দল ভোটে অংশ নিলেও নেই বিএনপি। ‘অংশগ্রহণমূলক’ না হলেও গাজীপুর, বরিশাল ও খুলনা সিটির ভোট ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। তবে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল।

বরিশালে এক মেয়র প্রার্থীর উপর হামলার পর এবার সিলেট-রাজশাহীর ভোট বর্জন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে না থাকলেও কমিশন বরাবরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, এ দুটো নির্বাচনেরই ডুপ্লিকেশন হবে সিলেট ও রাজশাহীতে। সেখানেও ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। এখন দেখা যাক। তবে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি ‘ভিন্ন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা এখনও আশাবাদী, সংসদ নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হবে।

রাজশাহী ও সিলেটে ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, “প্রতিটি নির্বাচনই আমাদের কাছে সমান চ্যালেঞ্জের। প্রতিটি নির্বাচন থেকে অভিজ্ঞতা নিচ্ছি, সবার প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সিলেট, রাজশাহী সিটি নির্বাচন এখন আমাদের সামনে। এখানেও শতভাগ নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠুভাবে করতে সক্ষম হব। আমাদের মেয়াদের সবগুলো নির্বাচনই ভালোভাবে করেছি, আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।”

তিনি জানান, ভোটের আগে, ভোটের দিন এবং পরে অনিয়ম, গোলযোগ ও সহিংসতা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে স্থানীয়ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান, সব দলও সমান। ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে আমরা বদ্ধপরিকর,” বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।

রাজশাহী

মেয়র পদে প্রার্থী

আওয়ামী লীগের এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা)

জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙ্গল)

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুরশিদ আলম (হাতপাখা)

জাকের পার্টির মো. লতিফ আনোয়ার (গোলাপ ফুল)

ভোট তথ্য

১০টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন এবং ৩০টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন, হিজড়া ৬ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৫৫টি এবং ভোটকক্ষ ১১৫৩টি।

ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা: প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন।

আইন শৃঙ্খলা: পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৩০টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১০টি, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ৬টি; র‌্যাবের ১৬টি টিম এবং বিজিবি ৭ প্লাটুন।

নির্বাহী হাকিম ৪৩ জন ও বিচারিক হাকিম ১০ জন। রিটার্নিং অফিসার রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।

ফিরে দেখা রাজশাহী সিটি ভোট

১৯৮৭ সালের ১ অগাস্ট রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের যাত্রা শুরু হয়। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এর আগে তিনবার নির্বাচন করে বিএনপির প্রার্থীকে দুইবার হারিয়ে মেয়র হয়েছেন; একবার হেরেছেন। এবার বিএনপি নেই ভোটে। তবে জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বরিশালের ভোটের পর।

২০০৮ এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তালা প্রতীকে ৯৮ হাজার ৩৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপি সমর্থিত মোসাদ্দেক হেসেন বুলবুল বাঘ প্রতীকে পান ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোট। ভোট পড়ার হার ছিল ৮১.৬১%।

২০১৩ সালের ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭ জন। মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন তিনজন। ১৮ দলীয় জোটের সমর্থনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মহানগর যুবদলের আহবায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ৪৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে। ভোট পড়ে ৭৬.০৯ %।

২০১৮ সালে খায়রুজ্জামান লিটন নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বুলবুল ধানের শীষ প্রতীকে পান ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট। লিটন ২০১৮ সালে যখন দ্বিতীয়বার মেয়র হন, তখন রাজশাহীতে ভোট পড়েছিল ৭৮. ৮৬ %।

সিলেট

মেয়র পদে প্রার্থী

আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা)

জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল)

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা)

জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল)

স্বতন্ত্র মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু (ঘোড়া)

স্বতন্ত্র মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট)

স্বতন্ত্র মো. শাহ জাহান মিয়া (বাস)।

স্বতন্ত্র মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ)

ভোট তথ্য

৪২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৭২ জন। ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬০ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন, হিজড়া ৬ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৭টি।

ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা: প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন।

আইন শৃঙ্খলা: পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৪২টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১৪টি, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ৬টি; র‌্যাবের ২২টি টিম এবং বিজিবি ১০ প্লাটুন। নির্বাহী হাকিম ৫৯ জন ও বিচারিক হাকিম ১৪ জন। রিটার্নিং অফিসার সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের।

ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের বাধা সৃষ্টির জন্য ঢাকা থেকে প্রচুর লোক আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।

ফিরে দেখা সিলেট সিটি ভোট

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন বদর উদ্দিন কামরান, ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও তিনি কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে জয়ী হন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হননি।

২০০৮ সালে নির্বাচনে সিলেট সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আনারস প্রতীকে পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৩৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ ফ ম কামাল পান ৩২ হাজার ৯৭ ভোট ভোট। ভোট পড়ার হার ছিল ৭৫%।

২০১৩ সালে এ সিটিতে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন। ক্ষমতাসীন মহাজোট সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য এবং সম্মিলিত নাগরিক জোটের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। ভোট পড়ে ৬২% ।

২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে ৬ হাজার ১৯৬ ভোটে পরাজিত করে মেয়র হিসেবে দ্বিতীয়বার মত জয় পান বিএনপির আরিফুল। এ নির্বাচনে আরিফুল পেয়েছেন মোট ৯২ হাজার ৫৮৮ ভোট। কামরান পান ৮৬ হাজার ৩৯২ ভোট। হার ছিল ৬৩% এর মত।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন