ইতিহাসের সাক্ষী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৩; সময়: ১২:০৯ pm | 
খবর > বিশেষ সংবাদ

আদিবা বাসারাত তিমা : দুর্লভ ঐতিহ্যের ধারক রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। এটি দেশের প্রথম জাদুঘর এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। দুষ্প্রাপ্য সব প্রত্নসম্পদ নিয়ে আজও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে এ জাদুঘর। যুগের পর যুগ ধরে বহন করে আসছে প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য।

রাজশাহী মহানগরের প্রাণকেন্দ্র হেতমখাঁ সদর হাসপাতালের সামনে অবস্থিত প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা এ জাদুঘরে উত্তরের বরেন্দ্র অঞ্চলের পাল, সেন, মৌর্য ও গুপ্ত আমলসহ হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন সংরক্ষিত করে রাখা আছে। তাই প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী এখানে আসেন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন দেখতে।

পাশের জেলা নাটোরের দিঘাপতিয়ার রাজপরিবারের বিদ্যোৎসাহী জমিদার কুমার শরৎকুমার রায়, খ্যাতনামা আইনজীবী ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ্রের প্রচেষ্টায় ১৯১০ সালে এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।

নির্মাণ শেষে ১৯১৯ সালের ২৭ নভেম্বর দ্বার উন্মোচন করেন লর্ড রোনাল্ডসে। ১৯৪৭ এর পর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর মারাত্মক দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে।

যার ফলে এটি রক্ষা ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনে ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর হস্তান্তর করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।

বর্তমানে জাদুঘরটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে। জাদুঘরে এখন পর্যন্ত সংগ্রহ সংখ্যা সাড়ে আট হাজারেরও বেশি।

এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার প্রস্তর ও ধাতবমূর্তি, ৬১টি লেখচিত্র, দুই হাজারেরও বেশি প্রাচীন মুদ্রা, নয়’শত এর বেশি পোড়ামাটির ভাস্কর্য-পত্র-ফলক, প্রায় ৬০টি অস্ত্র-শস্ত্র, ৩০টির মতো আরবি-ফার্সি দলিল, মোগল আমল থেকে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকারের রৌপ্য-ব্রোঞ্জ-মিশ্র ধাতুর প্রায় চর’শত টি মুদ্রা।

এছাড়া প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি পাণ্ডুলিপি আছে। এসব সংগ্রহ মোট ১৪টি গ্যালারিতে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের এক নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে প্রচীন আমলের ঢাল-তলোয়ার, ধাতবপাত্র, মহেঞ্জোদারো ও মহাস্থানের বিভিন্ন নিদর্শন। সম্রাট অশোক থেকে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত কাঠ, পাথর ও অন্য বস্তু দ্বারা নির্মিত মূর্তিগুলো প্রদর্শিত হয়।

দুই নম্বর গ্যালারি সূর্য, বিষ্ণ, শিব, কার্তিক ও অন্য দেবতার মূর্তি, পার্বতী, সরস্বতী, মনসা দুর্গা ও অন্য দেবীর মূর্তি।

তিন নম্বর বুদ্ধ গ্যালারিতে সব বুদ্ধ দেব-দেবী ও জৈন মূর্তি, বোধিসত্ত্ব, ঋসভনাথ, পর্শ্বনাথ ইত্যাদি প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও প্রাচীন আমলের আরবি, ফার্সি, সংস্কৃত, বাংলা লেখচিত্র এবং পাল যুগ, সুলতানি যুগ, মোগল যুগের শিলালিপি ছাড়াও শেরশাহর দুইটি কামান ও মেহরাব প্রদর্শিত হচ্ছে।

চার নম্বর ইসলামী গ্যালারিতে হাতে লেখা কোরআন শরীফ, মোগল আমলের ফার্সি দলিল, পোশাক মুদ্রা ইত্যাদি দিয়ে এ গ্যালারি প্রাচীন ঐতিহ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।

বর্তমানে পাঁচ নম্বর আবহমান বাংলা গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হয়েছে বাঙালি জাতির ব্যবহার্য জিনিসপত্র, প্রাচীন গহনা, দেশি বাদ্যযন্ত্র, আনুষ্ঠানিক মৃৎপাত্র, উপজাতিদের জিনিসপত্র।

কিশলয় বেষ্টিত নদীমাতৃক বাংলার নৌকার মডেল। অস্ত্রের সূর্য নরম সোনালি রোদ ছড়িয়ে জন্মভূমিকে করেছে অপরূপ সৌন্দর্য। সেখানে সেই চিত্র ফুটে ওঠে।

শুধু সংগ্রহশালা হিসেবেই নয় বরং প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যে অবদান রেখে চলেছে এই জাদুঘর।

প্রতি বছর দেশি-বিদেশি গবেষক, শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থী আসেন এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন উপভোগ করতে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন