মেধাবীর ট্যাব অন্যের হাতে

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৩; সময়: ১:৩৬ pm | 
খবর > তথ্য-প্রযুক্তি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক: ময়মনসিংহের নান্দাইলে এক মাদ্রাসায় সরকারি ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী নবম শ্রেণির ৪ রোলধারী মেধাবী শিক্ষার্থীকে ট্যাব না দিয়ে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে শ্যালকের মেয়ে ১৪ রোলধারী শিক্ষার্থীকে ট্যাব দিয়েছেন উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের কাদিরাবাদ আলিম মাদ্রাসার প্রধান। ট্যাব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত ওই শিক্ষার্থী গতকাল সোমবার তার বাবার সঙ্গে সদরে এসে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে।

উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের ব্যবস্থাপনায় উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে ট্যাব বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। এ উদ্দেশ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে নবম শ্রেণির ক্ষেত্রে ১ থেকে ৪ এবং দশম শ্রেণির ১ থেকে ৫ রোলধারী শিক্ষার্থীদের তালিকা চাওয়া হয়।

এর পর গত ৯ জুলাই নান্দাইল উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে মোট ৫৯০টি ট্যাব বিতরণ করা হয়। বিতরণের পর থেকেই কোনো কোনো শিক্ষার্থী স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে কম মেধাবীদের ট্যাব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে। কোথাও কোথাও স্থানীয়ভাবেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়।

কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে আসে খারুয়া ইউনিয়নের কাদিরাবাদ আলিম মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আমেনা খাতুন। তার রোল নম্বর ৪। নিয়ম অনুযায়ী তার ট্যাব পাওয়ার কথা। কিন্তু মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তাকে ট্যাব না দিয়ে দিয়েছেন ১৪ রোলধারী ঝুমা আক্তার পাপিয়াকে।

পাপিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজের শ্যালকের মেয়ে। ঘটনাটি জানতে পেরে আমেনা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
আমেনা খাতুন বলে, তাকে বাদ দিয়ে ১৪ রোলধারী পাপিয়াকে কেন ট্যাব দেওয়া হলো তা জানতে সে অধ্যক্ষের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে জানিয়ে তাকে গালাগাল করে তাড়িয়ে দেন। অধ্যক্ষ তাকে হুমকি দিয়েছেন, এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়া হবে। আমেনা এর বিচার চায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির এক মেধাবী শিক্ষার্থী মারিয়া খাতুনের রোল নম্বর ৫। নিয়ম অনুযায়ী তার ট্যাব পাওয়ার কথা। কিন্তু তাকে না দিয়ে সেটি দেওয়া হয় মাদ্রাসার প্রভাষক মোবারক হোসেনের ছেলে শিবলী হোসেন মোবারককে। অভিযোগ রয়েছে, শিবলী অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও রেজিস্ট্রেশন করে রাখা হয়েছে এ মাদ্রাসায়।

প্রভাষক মোবারক হোসেন বলেন, সময়ের অভাবে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল হয়েছে। পরে ট্যাবটি প্রকৃত শিক্ষার্থীকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর সন্তানের রেজিস্ট্রেশন এ মাদ্রাসা ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানে নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
শিক্ষার্থী মারিয়া খাতুনের ভাষ্য– বিষয়টি জানতে পেরে সে অভিভাবক ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের কাছে জানায়। শিক্ষকরা বিষয়টি সংশোধন করে ট্যাবটি তাকে ফেরত দেন।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ জানান, তাঁর মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে চারটি ও দশম শ্রেণিতে পাঁচটি ট্যাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ট্যাব দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। কী সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যা কিছু না, এটা ভুল হয়েছে। একটি ট্যাব ফেরত এনে মারিয়াকে দেওয়া হয়েছে। আর আমেনার বিষয়টিও মীমাংসার চেষ্টা চলছে।
৪ রোলধারী আমেনাকে না দিয়ে কেন ১৪ রোলধারী ঝুমাকে দেওয়া হলো– জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘ভুল তো ভুলই’।

আমেনাকে গালাগাল ও মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, এমন কথা তিনি বলেননি।

নান্দাইলের ইউএনও মোহাম্মদ আবুল মনসুর জানান, ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ এনে এক শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

 

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন