সরকারকে ধাক্কা মারার বিএনপির আন্দোলন সেপ্টেম্বরে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৩; সময়: ১১:৩১ pm | 
খবর > বিশেষ সংবাদ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সরকার পতনের আন্দোলন এখনো সরকারকে আঘাত করার পর্যায়ে যায়নি। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে তাকে প্রচার প্রচারণা, গণসংযোগ বলা যায়। এই অভিমত বিএনপি নেতা এবং তাদের সমমনা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের। তাই সেপ্টেম্বরে সরকারকে আঘাত করার মতো আন্দোলন করতে চায় তারা। সরকারকে ধাক্কা মারতে চায়।

বুধবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের এক সভায় এখনো কেন সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হচ্ছে না সেই প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন আনতে হলে বড় রকমের ঝাঁকুনি-সংগ্রাম দরকার। সে সংগ্রামে আমরা আছি। কিন্তু তা যথেষ্ট কি না, তা এখনই চিন্তা করতে হবে। সুনামির মতো অভ্যুত্থান ছাড়া এই দানবকে সরানো সম্ভব না।’

ফখরুলের এই চিন্তা শুধু বিএনপির মধ্যেই নয়, তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মধ্যেও। তারাও মনে করেন, সরকারের পতন ঘটাতে যে আন্দোলন করা দরকার সেই আন্দোলন হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, গণমিছিলসহ আরও যে কর্মসূচি পালন হয়েছে তাতে ভালো গণসংযোগ হয়েছে। কিন্তু তাতে সরকার পতনের মতো কিছু হয়নি। সরকারের পতন ঘটাতে হলে ভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশ স্থবির-অচল করে দিতে হবে।

বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের নেতারা বলছেন, কৌশলগত দুর্বলতা ও সমন্বয়ের অভাবে এখনো আন্দোলন সরকারের পতন ঘটানো পর্যায়ে নেয়া যায়নি। তবে সমন্বয়ের দুর্বলতা কেটে গেছে। তাই সেপ্টেম্বরকেই টার্গেট করা হয়েছে সরকার পতনের মতো আন্দোলন করার। হরতালকে বাদ দিয়ে তারা আর সব ধরনের কর্মসূচির চিন্তা করছেন।

এরমধ্যে আছে আদালত ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঘেরা, অবরোধ ও অবস্থানের মতো কর্মসূচি। তবে হরতাল নিয়ে ভিন্ন মতও আছে। কেউ কেউ মনে করেন সরকার পতনের জন্য কর্মসূচি হিসেবে হরতাল বেশ কার্যকর। তাই প্রয়োজনে সময় বুঝে হরতালও দেওয়া হবে। তবে হরতালের কোনো কর্মসূচি দেওয়া হলে তা বেশি আগে জানানো হবে না। আগেরদিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

তারা মনে করছেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে কিছু করা না গেলে সরকারকে আর কিছু করা যাবে না। কারণ অক্টোবরের শেষে অথবা নভেম্বরের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল হবে। তাই যা করার তার আগেই করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুর গেছেন চিকিৎসার জন্য। তিনি চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই ফিরে আসবেন। তারপর ‘বড় আন্দোলনের’ কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের শরীক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা শেষ হয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, সরকারের পতনই তো আমাদের এক দফা। আমরা তাই সরকারকে বড় জোর সেপ্টেম্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় দিতে পারি। তারপর আর না। আমাদের এখনকার আন্দোলন সরকার পতনের জন্য যথেষ্ট নয়। যেহেতু অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা আছে। তাই এরপরই আমরা সরকার পতনের মতো আন্দোলনে যাব।

তিনি বলেন, ‘হরতাল ছাড়া আমরা আর সব কর্মসূচির কথাই বলছি। ঘেরাও, অবরোধ সবই থাকছে। হরতালের বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের চিন্তা আছে। কারণ হরতাল ডাকলে সরকারের লোকজন দেখা যাবে গাড়ি পুড়িয়ে আমাদের দায় দেবে।’

তার কথা, ‘সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য মাঠের লোকজন প্রস্তুত আছে। বরং নেতৃত্ব পিছিয়ে আছে।’

আর ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে সরকার আঘাত টের পারে। বড় ধরনের ঝাঁকুনি দেওয়া হবে সরকারকে। আমরা সেপ্টম্বরেই যা কিছু করার করে ফেলব। আমরা হরতালে যাব না। তবে সচিবালয়, আদালত, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করব। আরও যা করার করব।’

তার কথা, আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের যে অভাব ছিল তা এখন আর নাই। আমরা এখন সব কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করব।

নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলন যা হয়েছে তা প্রচার প্রচারণা। বিশাল সমাবেশ, বিশাল মিছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি যা সরকারকে আঘাত করে। যেমন সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঘেরাও, হরতাল। আমরা হরতাল করছি না, কিন্তু বাকিগুলো সেপ্টেম্বর থেকে আমরা শুরু করব বলে চিন্তা আছে। আমরা এমন কিছু করব যা সরকারকে আঘাত করে।’

তার কথা, ‘এই সরকারকে বিদায় করতে না পারলে তো আর কিছু হবে না। বড় মিছিল আর সমাবেশ করে বাংলাদেশের কোনো সরকারকে বিদায় করা যায় না। ওই রকম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তো এখানে নেই। তাই সরকারকে সরাতে হলে আঘাত করে সরাতে হবে। আমরা সেটাই করতে চাই।’

আগামীকাল শুক্রবার বিএনপি ঢাকায় কালো পতাকা নিয়ে গণমিছিল করবে। পরের দিন শনিবার সারাদেশের মহানগরে একই কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এই কর্মসূচি বিএনপির সাথে যুগপৎ ভাবে পালন করবে আরও ৩৬টি রাজনৈতিক দল। তবে যুগপৎ হলেও কোনো কোনো দল শুধু শুধু গণমিছিল করবে কালো পতাকা বহন করবে না।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কালো পতাকা শোকের প্রতীক। আমরা তো চাই সরকার গো ব্যাক করুক। এর সাথে কালো পতাকা যায় না। তাই আমরা শুধু গণমিছিল করব।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স অবশ্য মনে করেন তারা এখন যে কর্মসূচি পালন করছেন তা সবই সরকারকে ধাক্কা দেওয়ার কর্মসূচি। এই ধাক্কা আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে তো বিদায় করতে হবে। তাই আরও বড় ধরনের ধাক্কা দেয়া হবে। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আন্দোলনের আঙ্গিকে পালন করা হবে। আরও নতুন ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেটা আগে বলা হবে না। ঘোষণা করলে আপনারা জানতে পারবেন।’

তার কথা, ‘এটা আগস্ট-সেপ্টেম্বরের বিষয় নয়। সরকার পতনের আন্দোলন তো চলমান আছে। এটাকে আরও জোরদার করা হচ্ছে।’ সূত্র- ডয়চে ভেলের

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন