সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা আর নেই

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৩; সময়: ৩:০৭ pm | 
খবর > বিশেষ সংবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তালুকদার ইত্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৭ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

জিনাতুন নেসা তালুকদারের বড় ছেলে মাহমুদ হাসান ফয়সল জানান, বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। রোববার সকালে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাহমুদ হাসান ফয়সল বলেন, আমার মা জিনাতুন নেসা তালুকদারের নামাজে জানাজা আগামীকাল সোমবার বাদ যোহর টীকাপাড়া ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে কাদিরগঞ্জ গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হবে। নামাজে জানাজায় সকলকে শরীক হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া পাড়া এলাকায় ১৯৪৭ সালের ৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন জিনাতুন নেসা তালুকদার। তার বাবা মৌলভী পারভেজ আলী মিয়া ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী। ১৯৬৩ সালে রাজশাহীর পিএন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন জিনাতুন নেসা। এরপর কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবন থেকেই সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন জিনাতুন নেসা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের একজন নেত্রী হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন তিনি।

এরপর ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে তার ভূমিকার জন্য তৎকালীন সরকারের খাতায় রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান জিনাতুন নেসা। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে সরাসরি মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি।

ভারতে গিয়ে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মহেন্দ্র রায় লেনের বিখ্যাত গোবরা ক্যাম্পে অস্ত্র পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবাদানের প্রশিক্ষণ নেন জিনাতুন নেসা । প্রশিক্ষণ শেষে তাকে ৭নং সেক্টরের সাব সেক্টর ৪- এর অধীনে দায়িত্ব দেয়া হয়। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেয়া ছাড়াও প্রয়োজনে সরাসরি যুদ্ধ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।

স্বাধীনতা অর্জনের পরও দেশ ও সমাজসেবায় নিয়োজিত ছিলেন জিনাতুন নেসা। ১৯৭৭ সালে তিনি নওহাটা ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। একইসঙ্গে চালিয়ে যান রাজনীতি ও সমাজ গড়ার কাজ। ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের প্রথমে উপমন্ত্রী ও পরে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রাসিক মেয়রের শোক

এদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা তালুকদারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এক শোক বিবৃতিতে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগে জিনাতুন নেসা তালুকদারের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

মেয়র লিটন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাহসী নেতৃত্ব, সততা ও আদর্শের প্রতি অবিচল ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা তালুকদার। তিনি কলেজ জীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। নারী অধিকার বাস্তবায়নে ভুমিকা রাখায় বেগম রোকেয়া পদক-২০১৮ এবং শিক্ষা সম্প্রসারণে অবদান রাখায় ১৯৯৮ সালে মীর মোশাররফ হোসনে পদক পান অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তালুকদার। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন