হরতাল-অবরোধে চরম ক্ষতির মুখে বরেন্দ্রের মাছচাষিরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩; সময়: ১২:১২ pm | 
খবর > অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে মাছ চাষে ঘটেছে নীরব বিপ্লব। সব জাতের মাছ উৎপাদনে সারা দেশে এ জেলার অবস্থান চতুর্থ। আর রুই মাছের উৎপাদনে প্রথম রাজশাহী। এছাড়া বিপণনেও রয়েছে শীর্ষ স্থানে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হরতাল ও অবরোধে নানা সংকটে পড়েছেন এ বরেন্অদ্ঞ্চরলের মাছ চাষিরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে এ অচলাবস্থার। রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, পাঙাশ ও তেলাপিয়াসহ সব প্রজাতির মাছের দাম গত এক মাসে কমে গেছে। আর এর বিপরীতে বেড়েছে মাছের খাদ্যের দাম ও পরিবহণ খরচ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন রাজশাহী থেকে ঢাকা এবং সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়াইশ ট্রাক মাছ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে হরতাল ও অবরোধের কারণে ৫০ ট্রাকের বেশি মাছ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সড়কে চলাচল ঝুঁকির কারণে ট্রাক ভাড়াও বেশি নিচ্ছেন পরিবহণ মালিকরা। পাশাপাশি দাম কমার কারণে চাষিদের প্রতি ট্রাক মাছে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ চাষি মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন।

মাছচাষিরা বলছেন, ২৯ অক্টোবর হরতাল ও অবরোধ শুরুর পর থেকেই মাছের বাজারে নেমেছে ধস। ২০ দিন আগে রাজশাহীর রুই মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। অথচ এখন দুই কেজি ওজনের রুই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়। অথচ দুই কেজি ওজনের রুইয়ের কেজি ছিল ৩৪০-৩৫০ টাকা। কমেছে সিলভার কার্প মাছের দামও। দেড় কেজি ওজনের এ মাছের দাম ছিল ২১০-২২০ টাকা। এখন ১৩০-১৫০ টাকা কেজি। একই সময়ে কাতল মাছের দামও কমেছে। ৩ কেজি ওজনের প্রতি কেজি কাতলের দাম ছিল ৩২০-৩৩০ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৭০-২৮০ টাকায়। একইভাবে পাঙাশ ও তেলাপিয়াসহ অন্যান্য কার্পজাতীয় মাছের দামও বাজারে অন্য সময়ের তুলনায় কম।

পবা উপজেলার দাদপুর এলাকার জাতীয় পদকপ্রাপ্ত মাছচাষি মশিউর রহমান। তার প্রায় ছয়শ বিঘার পুকুর রয়েছে। তিনি বলেন, মাছের বাজার খারাপ। এ কারণে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু মাছের খাবার দেওয়াতো বন্ধ নেই। আমি একটি কোম্পানির রেডি ফিড ব্যবহার করি। ২০ দিন আগেও ওই কোম্পানির ২৫ কেজি বস্তার মাছের খাবারের দাম ছিল ১১৫২ টাকা। এখন বস্তাপ্রতি দাম ৮৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২৩৫ টাকা। তিনি বলেন, প্রতিদিন আমার দুইশ বস্তা মাছের খাবার প্রয়োজন হয়। প্রতি বস্তায় দাম ৮৩ টাকা বেশি হওয়ায় এখন প্রতিদিন ১৬ হাজার ৬০০ টাকা খাবারের জন্য বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসে চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা শুধু খাবার বাবদ লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। বাজারে মাছের দাম না বাড়লে আমার মতো অন্য চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

মোহনপুর উপজেলা সদরের মাছচাষী বাচ্চু মন্ডল বলেন, ২০ দিন আগেও রাজশাহী থেকে ঢাকার আব্দুল্লাপুরের ভাড়া ছিল ১৪-১৫ হাজার টাকা। এখন সেটি ১৮-১৯ হাজার টাকা। যাত্রাবাড়ির ভাড়া ছিল ১৬ হাজার টাকা। এখন সেটি ১৯ হাজার টাকা। সিলেটের ভাড়া ছিল ২৮ হাজার টাকা। এখন সেটি ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া অন্য স্থানের ভাড়াও বেড়েছে। মালিকরা ট্রাক সড়কে নামাতে চাচ্ছেন না। ফলে বেশি টাকাতেই ট্রাক ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন মাছচাষীরা।

মহানগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকার ট্রাক মালিক বেলাল হোসেন ও শাকিল আহমেদ বলেন, সারা দেশেই ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহণে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। ট্রাকচালক ও তাদের সহযোগীরা জীবন নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া ট্রাকে অগ্নিসংযোগের আশঙ্কায় রয়েছেন মালিকরা। ফলে তারা সড়কে ট্রাক নামাতে চাচ্ছেন না। আর বিভিন্ন ঝুঁকির কারণে চালক ও তাদের সহযোগীরা পারিশ্রমিক বেশি চাচ্ছেন। এ কারণে আমরা ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

সার্বিক বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে মাছের দাম কম। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে খাবারের দামও বেড়েছে। এ কারণে অনেক চাষি মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন। আশা করছি এ সংকট থাকবে না। অচিরেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে চাষিরা ভালো দামে মাছ বিক্রি করতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পুকুরের সংখ্যা ৫০ হাজার ৭২০টি। এছাড়া ১১টি নদী, ৬৭টি বিল, ১৬০টি খালসহ অসংখ্য জলাভূমিতেও মাছ চাষ হয়। রাজশাহীতে বছরে ৮৭ হাজার ২৭০ টন মাছ উৎপাদন হয়। সূত্র-যুগান্তর

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন