ভাঙনের চাপে সতর্ক বিএনপি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৩; সময়: ১০:৫৭ am | 
খবর > বিশেষ সংবাদ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : গত দেড় দশকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দলের ঐক্য ধরে রাখাকে বিএনপির সবচেয়ে বড় সফলতা হিসেবে বিবেচিত হয়। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দলে বড় ধরনের ভাঙনের আলোচনা সামনে আসলেও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। এবারও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিতে ভাঙনের চাপ, আঁতাত, সন্দেহসহ নানা নেতিবাচক আলোচনা সামনে আসছে। তবে বিএনপি এনিয়ে বেশ সতর্ক।

বিএনপি সূত্রমতে, গত দেড় দশকে বিএনপি ভাঙনের চেষ্টায় ক্ষমতাসীনরা সফল না হওয়ায় এবার ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে বলে দলটির কাছে তথ্য আছে। এজন্য গ্রেপ্তার, অভিমানি, পদবঞ্চিত, প্রবীণ এবং সংসদ সদস্য হওয়ার অতি আগ্রহী উঠতি নেতাদের টার্গেট করা হয়েছে। এর সংখ্যা খুব বেশি নয়। ৬০ থেকে ৭০ জন নেতাকে টার্গেট করে ৪০ থেকে ৪৫ জনকে প্রার্থী করানোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বিএনপির সমমনা দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

বিএনপি সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে ভাঙার নানা তৎপরতা চলছিল। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে সহিংসতার ঘটনায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের ডজন খানেক নেতাকে গ্রেপ্তারের পর দল ভাঙার বিষয়টি আবারও সামনে আসে। দল ভাঙার তৎপরতার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে আলোচনা শুরু হয়। সেই সঙ্গে অনেকে ২০০৭ সালের এক-এগারোর সময়কার দলের সংস্কারপন্থি অংশটির সঙ্গে তৎপরতাকে মেলানোর চেষ্টা করেন।

বিশেষ করে গত ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর বিএনপির অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘কথিত’ উপদেষ্টা পরিচয়ে জাহিদুল ইসলাম আরেফী নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্রয়াত সংস্কারপন্থি নেতা সাদেক হোসেন খোকার পুত্র ইশরাক হোসেন অংশ নিলে সন্দেহ বৃদ্ধি পায়।

পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে নতুন দল হচ্ছে ও তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে অনেকেই লাইন ধরে আছে বলে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানালে ভাঙন আলোচনা ডালপালা বিস্তৃত হয়। কিন্তু মেজর (অব.) হাফিজ নতুন দল গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করায় এবং তৃনমূল বিএনপিতে বিএনপির কোনো নেতা যোগ না দেওয়ায় ভাঙন আলোচনায় ভাটা পরে। তবে বিএনপিতে আরও সতর্কতা বাড়ানো উচিত বলের নেতাকর্মীরা মনে করে।

এদিকে, বিএনপির কাছাকাছি নামে নিবন্ধন পাওয়া ‘কিংস পার্টি’ নামে পরিচিত পাওয়া দুটি দলে বিএনপির বেশ কিছু নেতা এর মধ্যে যোগদান করেছেন। আরও অনেকে আছেন এই পথে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোট বর্জন করলে এই নেতারা হয় কিংস পার্টিতে না হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। তাদের মতে, ভোটে না গেলে বিএনপি হারিয়ে যাবে। ‘অস্তিত্ব রক্ষায়’ হলেও বিএনপির ভোটে অংশ নেয়া উচিত।

বিএনপির কোণঠাসা সাবেক-বর্তমান অনেক নেতা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন; তারা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতির আলোচনায় থাকা সাবেকদের মধ্যে আছেন, বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলের খুলনা মহানগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন।

এদিকে সোমবার বিএনএম নামক নতুন রাজনৈতিক দলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন, ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর, ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুল ওয়াহাব, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের দেওয়ান শামসুল আবেদিন ও বরগুনা-২ আসনের অধ্যাপক আব্দুর রহমান। এর বাইরেও আরও অনেক চমক আসবে বলে জানান বিএনএমের মহাসচিব ও মুখপাত্র ডক্টর মো. শাহজাহান। বিএনএমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নাম রয়েছে আলোচনায়।

এর আগে গত ১৫ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে নতুন জোট করে ভোটে আসার ঘোষণা দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব ও এ কে এম ফখরুল ইসলাম। নিবন্ধন না থাকায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন বলে জানান। নতুন এই জোটে বিএনপির বর্তমান ও সাবেক ১২৫ জন নেতা রয়েছেন বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। তবে নেতাদের নামের কোনো তালিকা দেওয়া হয়নি। এর কিছুক্ষণ পর আহসান হাবিব ও ফখরুল ইসলামকে বহিষ্কার করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় বিএনপি।

এদিকে, আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ভূমিকাসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে দলের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বিএনপিতে সন্দেহ বাড়ছে। ঢাকা মহানগর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যারা আন্দোলনে কোনো ভূমিকা পালন করছেন না তারা আছেন সন্দেহের তালিকায়। এর বাইরে গত রোববার হরতালের মধ্যে কারাগার থেকে বের হয়ে ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীর ফুলেল শুভেচ্ছা নেওয়ায় সন্দেহের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান।

দলের ভাঙনের আলেচনা প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, ভাঙন চেষ্টা নিয়ে দল চিন্তিত নয়। কারণ, মূলধারার, ত্যাগী ও উচ্চ পর্যায়ের কোনো নেতাকে কোনো চাপ দিয়ে দলছুট করতে ক্ষমতাসীনরা সক্ষম হবে না। এরপরেও বিতর্কিত কিছু নেতা, সংস্কারপন্থি ও তাদের উত্তরসুরিদের নজরে রাখা হচ্ছে। ২/১ স্থানে আন্দোলনের জন্য চিহ্নিত সংস্কারপন্থিদের দায়িত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে তাদের কার্যক্রম। বিপথগামী হওয়ার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনাও আছে দলটির হাইকমান্ডের।

রাজনৈতিক মহলের বিএনপি ভাঙনের আলোচনা প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান যায়যায়দিনকে বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার পাশাপাশি গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ বিএনপি ভাঙনের চেষ্টাও বারবার ব্যর্থ হয়েছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন