কালিবাবুর ঐতিহ্যবাহী বাটার মোড়ের জিলাপি

নম্রতা জয়সোয়াল : বাঙালি রশনা বিলাসীদের কাছে মিষ্টি জাতীয় খাবারের কদর একটু বেশি। জিলাপি পছন্দ করেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। মিষ্টি প্রেমিকদের কাছে জিভে জল আনা এমন একটি খাবারের নাম হলো জিলাপি।
রাজশাহী শহরের বাটার মোড় বললেই মনের অজান্তেই যেটির নাম সবার আগে আসে সেটি হল জিলাপি।
এই মোড়টি বিখ্যাত হয়ে আছে রসে ভরা টই টুম্বুর জিলাপির জন্য। স্বাদ আর মিষ্টি গন্ধের সমাহার নিয়ে এখনো টিকে আছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বাটার মোড়ের জিলাপি। নগরীর প্রাণ কেন্দ্র বাটার মোড় দিয়ে যাবার সময় নাকে ধরা দেয় এখনো সেই মিষ্টি গন্ধ।
নজর ঘুরালেই দেখতে পাওয়া যায় একটা লোহার কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে গরম গরম জিলাপি। জিলাপি প্রেমিকদের জন্য এটা একটা আলাদা স্বাদ।
এই দোকানের নিয়মিত ভোক্তা সুমন হোসেন জানান, জিলাপি খাবার ইচ্ছে হলেই এই দোকানে ছুটে আসি। এখানকার জিলাপি খুবই সুস্বাদু যা অন্য কোন দোকানে পাইনা। শুধু আমি না আমার বন্ধু-বাদ্ধবসহ সকলেই এই দোকানের সুমিষ্ট জিলাপি দীর্ঘদিন থেকেই খেতে আসি।
রাজশাহী শহরে পড়তে আসা শিক্ষার্থী সাইদ হাসান বলেন, রাজশাহী শহরের বাটার মোড়ের জিলাপির সুনাম ছো্ট্ট থেকেই শুনে আসছি। শহরে আসার পর এখানেই জিলাপি খেতে আসা হয়। রাজশাহীর বিভিন্ন দোকোন জিলাপি বিক্রি করতে দেখা যায়। কিন্তু এখানকার জিলাপির স্বাদ বরাবরই আগের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। রোজার মাসেও সব চেয়ে জিলাপির বেচা-বিক্রি এই দোকানেই দেখতে পাওয়া যায়।
জানা গেছে, বাটার মোড়ের জিলাপির যাত্রা শুরু হয় ষাটের দশকে। প্রতিষ্ঠাকালে দোকান টির নাম ছিল রানীবাজার রেস্টুরেন্ট। কয়েক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় সাইনবোর্ড এরপর থেকে বাটার মোড়ে জিলাপির নামেই পরিচিত এই দোকান।
নামহীন এই দোকানের সুনাম তিন প্রজন্ম ধরে। তখন দোকানের মালিক ছিলেন শোয়েব উদ্দিন। একমাত্র কারিগর ছিলেন জামিনী সাহা পরে যামিনী সাহার প্যাচ দেওয়া শিখে যান তার ছেলে কালীপদ সাহা।
১৯৮০ সালে বাবার মৃত্যুর পর প্রধান কারিগর হন কালিপদ সাহা। তার আসল নাম সন্তোষ সাহা। কালিপদের এই হাতে তৈরি জিলাপি একসময় রাজশাহীর মানুষের কাছে কালিবাবু নামেও পরিচিত হয়ে ওঠে।
কালি বাবু সাহা মারা যান ২০১৭ সালে। এখন বর্তমান কারিগর কালিপদ সাহার শিষ্য সাফাদ আলী সঙ্গে আছেন শফিকুল ইসলাম।
মান ধরে রেখে বছরের পর বছর জিলাপি তৈরি করে আসছে এখানকার কারিগরেরা। স্বাদেও কোন হেরফের নেই।
সাধারণ সময়ে দোকানটিতে দিনে ৮০ থেকে ৯০ কেজি জিলাপি বিক্রি হলেও রোজায় তা বেড়ে ২০০ কেজি ছাড়িয়ে যায়।