কুষ্টিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ নৌকার প্রর্থীর বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া : দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হতে না হতেই কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন ওই দুই আসনে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
কুষ্টিয়া-৩ আসন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ দলীয় ক্যাডার ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচন জিতে চান বলে অভিযোগ করেছেন কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ার তনু। তিনি মঙ্গলবার বেলা ৩টায় তার শহরের আড়ুয়াপাড়ার বড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তনু অভিযোগ করেন যে, মঙ্গলবার সকালে তার কর্মীরা সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায় প্রচারে যান।
এসময় বিনা উস্কানিতে এ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী মাহবুবউল আলম হানিফের অনুগত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মন্ডল তনুর কর্মীদের বেধড়ক মারপিট করে। পরে তনুর কর্মী মুকুল, সোহেল ও খালিদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ার তনু অভিযোগ করেন, সবে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে। এখনই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাহবুবউল হানিফ আসলে নিজের ক্যাডার বাহিনী আর প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে চাইছেন। তনুর বাবা কুষ্টিয়া পৌরসভার জনপ্রিয় মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আলী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ৭ জানুয়ারী কি হবে জানিনা, তবে হানিফের লোককেরা এখনই যা শুরু করেছেন তাতে আলামত ভালো মনে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমি বার বার পৌর নির্বাচন করেছি, সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছি। কিন্তু কখনই আমার বিরুদ্ধে কেউ সংবাদ সম্মেলনে করেনি। কারণ, আমি চিরকাল জনগনের রাজনীতি করেছি। তিনি দাবি করেন, হানিফরা খুনের রাজনীতি করেন, তাদের হাতে রক্তের দাগ আছে। তিনি বলেন, হানিফ হঠাৎ করে আত্মীয়ের কোটায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছেন। তাই জনগনের সাথে কোন সংযোগ নেই তার। এদিকে, তনুর কর্মীদের মারধোরের খবর সংগ্রহ করতে গেলে মিলন মন্ডল সংবাদ কর্মীদেরও মারধোর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি আব্দুর রউফ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তার আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জ পেশি শক্তি ব্যবহার করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন। মঙ্গলবার জর্জের লোকজন আমলাবাড়িয়া এলাকায় তার একটি নির্বাচনী কাযৃালয় ভেঙে দিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক রফিক কাউন্সিলারের নেতৃত্বে ক্যাডাররা সোমবার তার কুমারখালী শহরের বাসায় গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে।
আব্দুর রউফ দাবি করেন, শুরুতেই যদি এমন অবস্থায় হয় তাহলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন সুযোগ নেই। এদিকে, এ আসনে খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তারকে কোমরে লাইসেন্স করা পিস্তল ঝুলিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে। তার এ ধরণের একটি ছবি সামাজিক যোগায়োগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন্ন তুলেছেন।
প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ায় দুটি আসনে মঙ্গলবার যে সময়ে এই সহিংস ঘটনাগুলো ঘটে তখন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ সময় নির্বাচনের প্রার্থীদরে সামনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বক্তব্য দেন।