জয়পুরহাট-২ আসনে ভোটের মাঠ উত্তাপ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩; সময়: ৮:২৮ pm | 
খবর > নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট : প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পরপরই জয়পুরহাট-২ ( আক্কেলপুর-কালাই-ক্ষেতলাল) আসনে ভোটের মাঠে অশান্তির উত্তাপ দেখা দিয়েছে। এই আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা ও মারপিটের অভিযোগ তুলেছেন।

তিনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার রাত দশটার পর দুই শতাধিক কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে রির্টানিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীর গাজী রাতে তাঁর কার্যালয়ে ছুটে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ও তাঁর নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাত্রাই ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হাবীব তালুকদার লজিককে ডেকে নিয়ে কথা বলেন। প্রায় আধাঘন্টা পর গোলাম মাহফুজ চৌধুরী একা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত করে এজাহার দিতে কালাই থানায় রওনা দেন । এরপর আবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে আসবো।

এ সময় গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর সাংবাদিকদের বলেন, এরপরও যদি সুবিচার না হয় এমন কি আমার কর্মীদের এবং সাধারণ মানুষদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে এবং নিরাপত্তা দিতে না পারলে আমি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে প্রয়োজনের নিজের গায়ে নিজেই পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আত্মহতি দিব এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর কর্মী-সর্মথকেরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের ফটক ত্যাগ করেন।

জানতে চাইল রির্টানিং কর্মকর্তা জয়পুরহাটের ডিসি সালেহীন তানভীর গাজী সাংবাদিকের বলেন, পোষ্টার টাঙানো নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। জয়পুরহাট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর সঙ্গে আমার কার্যালয়ে কথা বলেছি। তাঁকে রাতেই কালাই থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। আমরাও অভিযোগ খতিয়ে দেখব।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সোমবার রাত দশটার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এসময় সেখানে গোলাম মাহফুজ চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহার শিমুল, মাত্রাই ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হাবীব তালুকদার লজিক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম বক্তব্যে দেন। তাঁরা বক্তব্যে বলেন, মাত্রাই বাজারে পোস্টার টাঙানো নিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে। মাত্রাই ইউপির চেয়ারম্যান শওকত হাবীব তালুকদার সমঝোতা জন্য সেখানে গেলে সরকার দলীয় প্রার্থী আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কর্মী-সমর্থক ও আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁকে হত্যার চেষ্টা চালান।

কর্মী-সমর্থকেরা মানব ঢাল তৈরী করে শওকত হাবীব তালুকদারকে রক্ষা করেন। মামলা ও মারপিটে জড়িতদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের অবস্থান ছাড়ব না। প্রয়োজনে আমরা সারারাত এখানে কেটে দিব। রাত সাড়ে দশটার পর রির্টানিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী তাঁর কার্যালয়ে আসেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ও মাত্রাই ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হাবীব তালুকদারকে জেলা প্রশাসক তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে আলোচনার পর গোলাম মাহফুজ চৌধুরী বেড়িয়ে এসে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে এজাহার দিতে কালাই থানায় রওনা দেন। এরপর কর্মী-সমর্থকেরা চলে যান। গোলাম মাহফুজ চৌধুরী রাত ১১ টার পর কালাই থানায় গিয়ে এজাহার দেন।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের পর সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় মাত্রাই বাজারের ময়দুল হাসান তালুকদারের দোকানে নৌকার পোষ্টার লাগাতে যায়। দোকানে সামনে পোস্টার লাগানো নিয়ে তর্কবির্তক হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল বাঁধে। এঘটনায় দুই পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেন। একটি মামলার বাদি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অপর মামলার বাদি মাত্রাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী ইমরান হোসেন। এই দুটি মামলায় ২৪ জন নামীয়সহ ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী বলেন, আমার কর্মী-সমর্থকদের মারপিট করা হয়েছে। তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সোমবার বিকেলে মাত্রাই নৌকার পোস্টার টাঙাতে গিয়ে আমার কর্মী-সমর্থকদের মারপিট করা হয়েছে। মাত্রাই ইউপির চেয়ারম্যান শওকত হাবীব তালুকদারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। কর্মী-সর্মথকেরা মানব ঢাল তৈরী করে তাঁকে রক্ষা করেন। রেজুয়ান হোসেন রাসু আমার কর্মীকে পিটিয় আহত করা হয়েছে। তাঁকে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আসামিরা তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর করে ১২ হাজার পোস্টার লুট করেছে। এঘটনায় মামলা করেছি।

কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, মাত্রাই বাজারে নৌকার পোষ্টার টাঙানোর সময় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর লোকজন বাঁধা দিয়েছেন। তাঁরা আমাদের কর্মী-সমর্থক ও দলীয় নেতাদের মারপিট করেছেন। আমাদের দুই কর্মী-সমর্থক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত করতে নাটক শুরু করেছেন।

কালাই থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) ওয়াসিম আল-বারী বলেন, মাত্রাইয়ের ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদি স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ও অন্যটি মাত্রাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী ইমরান হোসেন। দুটি মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন