নানা সংকটে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৪; সময়: ২:৪২ pm | 
খবর > শীর্ষ সংবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ : দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটের মধ্য দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মচারীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য সেবার কাজ চললেও নানাবিধ সমস্যায় পড়ছেন সেবাগ্রহীতারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগে ২০ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১২ জন ও শুন্য রয়েছে আটজন চিকিৎসকের পদ।

সূত্র মতে, চক্ষু অর্থপেডিক্স, পেডিয়াট্রিক্স, এনেসথেসিয়া, মেডিকেল অফিসার প্যাথলজিস্ট, এনেসথেসিওলজিস্ট, সহকারী সার্জন, মেডিকেল অফিসার পদে শুন্য রয়েছে।

এদিকে কর্মচারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে তিনজন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে দুজন, স্বাস্থ্য সহকারী পদে ২৭ জন, কম্পিউটার পদে একজন, কার্ডিওগ্রাফার পদে একজন, জুনিয়র মেকানিক পদে একজন, ল্যাব এটেনডেন্ট পদে একজন, ওটি বয় পদে একজন, ইমারজেন্সি এনটেনডেন্ট পদে একজন, এমএলএলএস পদে দুজন, ওয়ার্ড বয় পদে তিনজন, সুইপার পদে দুজন ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে দুজন।

অপরদিকে ১৫টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রয়েছে ব্যাপক জনবল সংকট। ১৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে মেডিকেল অফিসার পদে তিনজন, স্যাকমো ১১ পদে তিনজন, এমএলএলএস পদে ছয়জন, ফার্মাস্টিট ১১ পদে দুজন ও সহকারী সার্জন পদে দুজন করে দীর্ঘদিন ধরে শুন্য রয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা চত্বরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা চত্বর জুড়ে দালালদের দৌরাত্ব। দালালরা প্রতিটা রোগীকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে।

রোগী ধরে দালালরা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি দালাল ক্লিনিকের সাথে রোগী প্রতি চুক্তি করে এবং সন্ধ্যার সময় হিসাব শেষে টাকা লেনদেন করে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতালে প্রবেশের সময় চিকিৎসক থাকলেও নেই বলে ক্লিনিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে এবং কাউকে কাউকে নিয়েও যাচ্ছে দালালরা। সূত্র মতে, এ ধরণের প্রায় ৩০ জন দালাল রয়েছে।

রোগীর অভিযোগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দিলেও ঔষধ দেয় না। বাহির থেকে ঔষধ কিনতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ঔষধ থাকলেও তারা দেয় না। সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি ঔষধ বাহিরের দোকানে বিক্রি হচ্ছে।

এমনকি কৌশলে দোকানে গিয়ে ঔষধ কিনতে পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে আছে এবং ব্যবস্থা পত্রের ছবি তুলছে। এমনকি দায়িত্বরত চিকিৎসকদের রুমে গিয়ে আলোচনা করছে এবং বিভিন্ন ধরণের উপঢৌকন দিচ্ছেন।

সূত্র মতে, সন্ধ্যার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে মাদকাসক্ত ও বখাটেদের আড্ডা চলছে। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে আবর্জনা পড়ে থাকছে। অন্যদিকে সরজমিনে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কমিনিটি ক্লিনিকগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, দায়িত্বরত কোন কর্মকর্তাই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।

তারা শুধু ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত ও কমিনিটি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঔষধ ঠিক মত বিতরণ না করার অভিযোগ রোগীদের।

যদিও সরকারী ঔষধ বাহিরে বিক্রি, কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ভিড় ও মাদকাসক্ত ও বখাটেদের আড্ডা এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও জনবল সংকট, দালালদের দৌরাত্বে কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়রা খান জানান, জনবল সংকটের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

শিগগির শুন্য পদগুলো পূরণ হবে। এছাড়া দালালদের দৌরাত্ব কমাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলার প্রতিটি ক্লিনিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তাদেরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার মেলেনি। তবে দালাল প্রতিরোধ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও জানান, জনবল সংকট থাকলেও হাসপাতালে সেবার মান দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। তবে রোগীর অনুপাতে ঔষধ বরাদ্দ বেশী হওয়া প্রয়োজন।

তিনি জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বর্হিবিভাগে ৯৩ হাজার ৫৮৩ জন, জরুরী বিভাগে ১০ হাজার ৭৩০ জন ও ভর্তি ৮ হাজার ২৫৭ জন।

২০২২ সালে বর্হিবিভাগে ৮৯ হাজার ১৩৫ জন, জরুরী বিভাগে ৭ হাজার ৯০৯ জন ও ভর্তি ৭ হাজার ১৪৪ জন, ২০২১ সালে বর্হিবিভাগে ৭০ হাজার ৭৭৯ জন, জরুরী বিভাগে ৭ হাজার ৮১৫ জন ও ভর্তি ৫ হাজার ৪৯৭ জন।

২০২০ সালে বর্হিবিভাগে ৫০ হাজার ১৫৪ জন, জরুরী বিভাগে ৪ হাজার ৬৭৫ জন ও ভর্তি ৫ হাজার ৩৩০ জন রোগীর সেবা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে রোগী সংখ্যা আরো বাড়ছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন