সামান্য কমেছে গরিবের পাঙাশের দাম, বেড়েছে মাংসের!

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪; সময়: ১১:০৪ am | 
খবর > অর্থনীতি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা থামছেই না। সপ্তাহ ব্যবধানে চাষের মাছ ও হাতেগোনা কয়েকটি সবজির দাম কমলেও, ঊর্ধ্বমুখী বেশিরভাগ পণ্যের দামই। এতে পকেট কাটছে ভোক্তার। তাদের দাবি, বাজারে পণ্যের দাম এক টাকা কমলে, বাড়ে ৫ টাকা।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, আগানগর ও রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে চাষের মাছের দাম কিছুটা কমেছে। তবে বেশিরভাগ দেশি মাছের দামই চড়া। আর সবজি বাজারে কমেছে আলু, ফুলকপি ও মরিচসহ কয়েকটি পণ্যের দাম।

বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় কমেছে বেশকিছু পণ্যের দাম। সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকলে, আর অসাধুরা সিন্ডিকেট না করলে দাম কমবে সব পণ্যেরই।

আর ক্রেতাদের দাবি, ব্যবসায়ীদের অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি তারা। বাজারে কোন পণ্যের দাম ৫ টাকা বাড়লেও, কমার ক্ষেত্রে কমে মাত্র এক টাকা। এতে বাজারে পণ্য কিনতে হয় সেই বাড়তি দামেই।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে চাষের মাছের দাম কমেছে কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২০০ টাকা, চাষের শিং ৬০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫৫০ টাকা ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়।

তবে চড়া দেশি মাছের দাম। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, বাইম ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে।

কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বাদশা ব্যাপারী বলেন, সরবরাহ বাড়ায় ও বেচাকেনা কমায় চাষের মাছের দাম কিছুটা কমেছে। তবে এখনও চড়া নদ-নদীর মাছের দাম।

এদিকে, সপ্তাহ ব্যবধানে আলু, শিম, মরিচ, ফুলকপি বাদে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের শাক-সবজির দাম। কেজিতে দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা জানান, পাইকারি দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুলা ২৫-৩০ টাকা, শালগম ৩০-৪০ টাকা, করলা ৬০-৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন জাতভেদে ৬০-৯০ টাকা, ক্ষীরাই ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ৬০-৭০ টাকা, কহি ৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০-৪০ টাকা ও পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আর প্রতি পিস লাউ ৮০-১০০ টাকা, আকারভেদে প্রতিপিস ফুলকপি ৩৫-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকা ও ব্রকলি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, উভয় পর্যায়ে দাম কমে পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায় ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। এছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, পালংশাক ১০ টাকা ও লাউ শাক ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সোহেল হোসাইন নামে এক ক্রেতা বলেন, কয়েকটি সবজির দাম কমলেও, চড়া বেশিরভাগের দাম। শীতকাল শেষের দিকে, তবুও শীতকালীন সবজির বাজারে এখন পর্যন্ত স্বস্তির দেখা নেই এবার।

বাজারে ঊর্ধ্বমুখী মুরগি ও গরুর মাসের দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০-২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৭০০ টাকায়।

বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বাড়ায় এর প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের রিপন বলেন, বাজারে মুরগি কম আসতেছে। এর প্রভাব পড়ছে বাজারে।

আর গত এক সপ্তাহে কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০-৭৫০ টাকায়। তবে বাড়েনি খাসির মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।

এছাড়া প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, রমজান মাস শুরুর আগেই অস্থির হয়ে উঠা রোজার পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব পণ্য।

বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০-১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫-৮০ টাকা, ডাবলির ডাল ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫-১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫-১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০-১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১০৫-১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০-৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫-৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫-৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭০ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও!

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা হামিদ জানান, মূলত রোজাকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে মিল মালিকরা। এর প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।

সপ্তাহ ব্যবধানে আবারও দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। প্রতি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। তবে বাজারে দেখা নেই পুরাতন দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

বিক্রেতারা জানান, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে, তাই ফের দাম বাড়ছে। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আসলাম বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। এতে বাজারে সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। তবে শিগগিরই ফরিদপুরের হালি পেঁয়াজ তোলা শুরু হবে। এ পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমবে।

তবে বাজারে নতুন রসুনের সরবরাহ বাড়ায় কমেছে রসুনের দাম। দেশি নতুন রসুন কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। আর আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ২২০-২৪০ টাকা।

এছাড়া মানভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে আদা ও রসুনের। তবে মানভেদে দামে কিছুটা তারতম্য আছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন