গুরুদাসপুরে লিচুর বাগানে স্বপ্ন দেখছেন মৌ-খামারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুর : নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার লিচু বাগানের গাছে গাছে মুকুল ফুটেছে, ছড়াচ্ছে গন্ধ। লিচুর উৎপাদন বাড়াতে বাগানে বাগানে চাষিরা বসিয়েছেন মৌ বক্স।
সেখান থেকে দলে দলে মৌ-মাছির ঝাঁক বসছে লিচুর মুকুলে। এতে লিচুর বাগানে মৌ-খামারীরা মধু সংগ্রহ করে ও লিচুচাষি দুপক্ষই হচ্ছেন লাভবান।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর, বিয়াঘাট, চাপিলা ইউনিয়নসহ উপজেলা জুড়ে বানিজ্যিক ভিত্তিতে মোজাফ্ফর,বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রিজাতের লিচুর আবাদ হয়ে থাকে।
উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে ২০০টি বাগান রয়েছে। এসব বাগানে ১৫০ জন খামারি মৌ-বাক্স বসিয়েছেন। মাত্র তিন সপ্তাহে (মার্চের শুরু থেকে তৃতীয় সপ্তাহ) প্রতিটি মৌ-বাক্সে ১৮ থেকে সাড়ে ১৮ কেজি মধু হয়।
গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ও বিয়াঘাট ইউনিয়ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, গাছে গাছে মুকুল মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেসব গাছের নিচে ৭০ থেকে ৮০টি করে মৌ বাক্স বসিয়েছে মৌ-খামারীরা। মৌ মাছির দল মুকুল মুকুলে বসেছে। আবার উড়ে এসে বসছে মৌবাক্সে। খামারীরা আবার বাক্স থেকে মধুও সংগ্রহ করছেন।
মৌ খামারি আশরাফুল ইসলাম, রানা আহমেদ, তালেব আলী, সোহেল রানা বলেন, লিচু বাগানে ৬ শতাধিক ব্রুড ও নিউক্লিয়াস নামের ছোট বড় কাঠের বাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বাক্সে একটি রানী মৌমাছি,একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য এপিচ মেইলিফ্রা জাতের কর্মী মৌমাছি রয়েছে।
কর্মী মৌমাছিরা মৌ মৌ গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে। পরে মুকুল হতে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির দল নিজ নিজ কলোনিতে মৌচাকে এনে জমা করে।
মৌ-খামারীরা আরো জানান, সরিষার মধুর দাম বেশি থাকে। তবে লিচুর মধু বাড়তি উপার্জন হয় তাঁদের। স্থানীয় চাষি ছাড়াও সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও পাবনাসহ দেশের অনেক জেলা থেকেও মৌ চাষিরা আসনে মধু সংগ্রহে। ছোট বড় নানা আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৌ চাষ করে থাকেন তাঁরা।
নাজিরপুর ইউনিয়নের লিচু চাষি মো. আব্দুস সালাম বক্স ও সাকাওয়াত হোসেন বলেন, উপজেলা জুড়েই বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ হচ্ছে। গত ১২ বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে লিচু চাষে সফলতা পাচ্ছে চাষিরা। তবে কীটনাশকের চেয়ে মৌ-মাছির পরাগায়ন পদ্ধতি লিচুর উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, লিচুর মুকুলে মৌ-মাছি বসলে পরাগায়ন ভালো হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর ফলন বৃদ্ধি হয়। একই সাথে লিচুর আকার-আকৃতিও বাড়ে।
এতে লিচু চাষিরা আর্থিক ভাবে লাভবান হন বেশি। পাশপাশি মৌ-খমারীরাও বাণিজ্যিক ভাবে মধু সংগ্রহ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। ১৫ বছর ধরে এপন্থা অনুসরণ করে লাভবান হচ্ছেন লিচুর বাগান মালিক ও মৌ-খামারীরা।