সেতু ভবনে যেভাবে চলে তাণ্ডব

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৪; সময়: ১০:৩৮ am | 
খবর > জাতীয়

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নয়, বরং হঠাৎ জড়ো হওয়া দুর্বৃত্তরা দফায় দফায় সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে সেতু ভবনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। একাত্তরের হাতে আসা সিসি ক্যামেরার ছবি, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান ও ড্রোন ফুটেজে জানা গেছে নাশকতার বিস্তারিত। যাতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় কর্মসূচিতে ব্যস্ত, তখন ছাত্র নয় এমন কয়েকটি চক্র হামলা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে সেতু ভবনে। তাদের হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র।

১৮ জুলাই, বৃহস্পিতবার, বিকেল সাড়ে পাঁচটা। কয়েকটি ড্রেন চোষে বেড়াচ্ছে মহাখালী রেল গেইটের এপাড়-ওপাড়ে। শিক্ষার্থী আর পুলিশের ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া কিছুটা থিতিয়ে এসেছে। মহাখালী ফ্লাইভার থেকে কাকলী যাওয়া রাস্তার মানুষেরা ঘরের পথে। সেতু ভবনের কর্মীরাও ঘরে ফিরতে বহুতল ভবন থেকে নিচে নামছিলেন।

সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী সেতু বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ বলেন, দুর্বৃত্তরা গেইট দিয়ে ঢুকতে চাচ্ছিলো। কিন্তু বন্ধ থাকায় পারছিলো না। পরে একজন ওপর দিয়ে এসে গেট খুলে দেয়। তারপর বহু লোক ঢুকে এলোপাথাড়ি হামলা করতে থাকে।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রাশিদুল হাসান বলেন, প্রথমে ভবনটির দুই দিকের কাঁচ ভাঙা হয়। আমাদের ধারনা ছিল, এতোটুকু করেই তারা চলে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।

চারটি ক্যামেরার ফুটেজ বলছে, সন্ধা ছয়টা ২৫ মিনিটে প্রথম গেইটের ভেতর ইট পরে। প্রথম দলটির হামলাও তখনই।

এ ব্যাপারে রাশিদুল হাসান বলেন, এর পর যখন আরও কিছু লোক এসে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে তখন আমরা সবাই ভেতরে চলে যাই।

এক ঘণ্টার মধ্যে চারটি আলাদা দল চার দফায় হামলা করে। প্রথমেই মোটরসাইকেল লুট ও আগুন। এরপর গাড়ি ভাঙচুরের ভিডিওতেই দেখা যায় অন্তত চার জন নেতৃত্বে। ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরানো ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর নিশ্চিত করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। যারা নিজেরা সহিংসতায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি দলটিকে পরিচালনা করছিলো। তাদের মুখে ছিলো মুখোশ।

তানভির বলেন, মুখোশ পড়া হামলাকারীদের বয়স কম বলে মনে হয়েছে। আবার কারো বয়স একেবারেই কম ছিল। তবে তাদের ছাত্র বলে মনে হয়নি।

সেতু বিভাগের যুগ্মসচিব ভিখারুদ্দৌলা চৌধুরী বলেন, গাড়িতে আগুন দেওয়ার পর গ্যাসের সিলিন্ডারগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হচ্ছিলো। ওই ধোঁয়া অফিসের দিকেও আসছিল। তখন আমরা নামার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দেখলাম আগুনের তাপে এবং বিকট শব্দে ভবনের কাঁচগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আমরা চাইলেও তখন বের হতে পারছিলাম না, সে এক ভীতিকর ও বিভৎস্য অবস্থা। আমাদের মনে হচ্ছিলো, অফিসের ভেতরে থাকলে আগুনে পুড়ে মারা যাবো, আর বাহিরে গেলে হামলাকারীদের হাতে।

৩০ টির মতো গাড়ি ছিল বেইজমেন্ট পার্কিংয়ে। নিরাপত্তা কর্মী ও চালকরা দ্রুত শাটার টেনে দেওয়ায় তাদের বুদ্ধিতে সেগুলো রক্ষা পায়। যদিও হিসাব বিভাগের আশরাফ তার সহকর্মীকে নিয়ে প্রাণপন লড়েও পোড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি প্রিয় কর্মস্থলকে।

সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, বাহিরে যে মোটরসাইকেলগুলো দুস্কৃতকারীরা পোড়াচ্ছিলো সেই আগুনই হাতে করে এনে গাড়ি দেয় সন্ধ্যায় ছয়টা ৩৬ মিনিটে।

ক্যামারের ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একই দল, একই নেতৃত্বে ঠিক এক ঘণ্টা চার মিনিট আগে লাইটার এগিয়ে দিয়েছিল কর্মীদের।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন