জয়পুরহাটে বেড়েছে চালের দাম

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৪; সময়: ৭:৪১ pm | 
খবর > অর্থনীতি

এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট : ইরি-বোরোর ভরা মৌসুমে ধানের জেলা জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাট-বাজারে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালে কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। এ নিয়ে স্থানীয় চালকল মালিকরা বলছেন, দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি, বৈরী আবহাওয়া ও ধানের দাম বাড়ার কারনে চালের দামে প্রভাবে পড়েছে। সেই সাথে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়েও চালের দাম বেড়েছে। কেজিতে ২/১ টাকা লাভ করে বিক্রি না করলে পেট চলবে কিভাবে। কমতি তো আছেই।

জানা গেছে, ধান উৎপাদনে দেশের অন্যতম জেলা জয়পুরহাট। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা এ জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৬৯ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪ লাখ সাড়ে ২২ হাজার মেট্রিক টন ধান। তাতে চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৬ মেট্রিক টন। সে অনুযায়ী উৎপাদনও হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যোগানও দিয়ে আসছে। হঠাৎ করে সপ্তাহ খানেক থেকে জেলার বিভিন্ন আড়ৎ ঘরে সব ধরনের চালের কেজিতে ২ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার সেই চাল খুচরা বাজারে কেজির উপর ৪ থেকে ৫ বেশীতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজারে মোটা জাতের রনজিত, স্বর্ণা-৫, বিআর-২৯ ছিল ৪৮ টাকা কেজি। এখন সেই চাল খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি। আর ৫৭ টাকার জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকায়, ৬০ টাকার কাটারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। এতে গত সপ্তাহের চেয়ে বর্তমানে সব ধরনের চালের দাম পাইকারিতে বেড়েছে কেজিতে ২ টাকা আর খুচরাতে বেড়েছে কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা। হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে দিনমজুর ও স্বল্প বেতনের চাকুরীজীবিরা বেশী কষ্টে রয়েছেন। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকির দাবি করেন তাঁরা।

শহরের নতুনহাটে চাল কিনতে আসা শান্তিনগরের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন,‘চাল কেনার জন্য বাজারে এসে দেখি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশী। তাই ৫ কেজি না নিয়ে ৪ কেজি কিনেছি। বর্তমানে কামাই কাজও মিলছে না। খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অত্যান্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার সকালে পাঁচশিরা বাজারে কথা হয় হাতিয়র গ্রামের আব্দুল আলিমের সাথে। তিনি বলেন,‘সরকার চালসহ নিত্যপণ্যর দাম কমানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ নেন, তা আমরা বাজারে এসে দেখতে পাইনা। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারে এমন কঠর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

সড়াইল গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন,‘চালের দাম হঠাৎ করে বাড়ায় আমরা সাধারণ মানুষ অনেক বেকায়দায় পড়েছি। বাজার নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে এর মাসুল আমাদেরকেই গুণতে হবে। খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা দরকার বলে আমি মনে করি।

নতুনহাটে খুচরা চাল বিক্রেতা আজাদুল ইসলাম বলেন,‘মোকামেই চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেশী। এ কারনে খুচরা বাজারে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশী। মোকামে এক বস্তা (৫০ কেজি) চাল এক সাথে মেপে দেয়। সেই চাল ২/৩ কেজি করে বিভিন্ন জনের নিকট বিক্রি করতে হয়। এতে কমতিও হয়। আমাদের কেজিতে ২/১ টাকা লাভ করলেই চলে।’

আরেক চাল বিক্রেতা হাফিজুর বলেন,‘গত সপ্তাহে মোকামে মোটা স্বর্ণা-৫ চাল ছিল ৪৬ টাকা কেজি, সেই চাল এখন মোকামেই বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি। আমরা খুচরা বাজারে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশীতে বিক্রি করছি। আবার চিকন জিরাশাইল চাল মোকামে বিক্রি হয়েছে ৫৭ টাকায়। আজ সেই চাল মোকামেই বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি। আমরা সেই চাল খুচরা বাজারে বিক্রি করছি প্রতিকেজি ৬০ টাকায়। তবে দাম বৃদ্ধির পর থেকে খুচরা বাজারে চাল কম বিক্রি হচ্ছে।

পাঁচশিরা মোকামের আকন্দ রাইস মিলের ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ আকন্দ বলেন,‘ধানের দাম মন প্রতি ২’শ থেকে আড়াই’শ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার আবওহাওয়াও বৈরী যাচ্ছে। ঠিকমত চাল উৎপাদনও করতে পারছেন না মিল মালিকরা। সবমিলে কেজিতে গত এক সপ্তাহ ধরে এক থেকে দেড় টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে চালের দাম স্বাভাবিক হবে।’

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন,‘কেজিতে ২/১ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন কথা আমরাও শুনেছি। এ নিয়ে মিল মালিকদের সাথে আমরা কথাও বলেছি। চাল নিয়ে সিন্ডিকেট করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আগের চেয়ে বর্তমানে মোবাইল কোর্ট ও বাজার মনিটরিং জোরদার করেছি। বর্তমানে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন