‘গরিবের পাঙাশেই’ হিমশিম, ইলিশ যেন ছুঁতেও ভয়

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কেরানীগঞ্জে বিভিন্ন মেসে ও দোকানে দুপুরের খাবার বিক্রি করেন ভানু দত্ত। আগে রান্নার পদে নিয়মিত পাঙাশ বা তেলাপিয়া মাছ রাখলেও এখন বাড়তি দামে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। একই অবস্থা স্কুল শিক্ষক হামিদ হোসেনেরও। বাজারে ইলিশ কিনতে এসে দাম শুনেই চোখ কপালে তার।
ঊর্ধ্বমুখী দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। আর মাছের বাজার অস্থির আগে থেকেই। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর এবং রাজধানীর কারওয়ানবাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুল কাঁচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে চড়া প্রায় সব ধরনের মাছের দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজি প্রতি বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত।
লাগামহীন এই বাজারে দেশি মাছের পাশাপাশি স্বস্তি নেই পাঙাশ-তেলাপিয়াতেও। আর রুপালী ইলিশ যেন দেখেই শান্তি। দামের উত্তাপে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতেও ভয় সাধারণ ক্রেতার। মাছের এই ঊর্ধ্বমুখী দামে নাজেহাল অবস্থা নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চমধ্যবিত্ত সবারই। তাদের দাবি, বাজারে পর্যাপ্ত মাছ থাকলেও সংকটের কথা বলে কারসাজি করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে আসা স্কুল শিক্ষক হামিদ জানান, আগে জানতাম ভাতে-মাছে বাঙালি। কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের পাতে প্রতিদিন মাছ ওঠাই দুষ্কর। বিশেষ করে ইলিশ কেনা তো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইলিশ এখন ছুঁয়ে দেখতেও ভয় লাগে। দাম জিজ্ঞেস করা তো দূরের কথা।
কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের খাবারের মেস চালানো ভানু দত্ত সময় সংবাদকে বলেন, মেস চালানো এখন অনেক কষ্ট। আগের থেকে পাঙাশের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০-৫০ টাকার মতো। এতে ব্যয় বাড়ছে। আর খাবারের দাম বাড়ালে কাস্টমাররা কিনতেও চায় না। অন্য জায়গায় চলে যায়। আবার খাবারের দাম না বাড়ালেও লাভ থাকে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি বন্যায় ভেসে গেছে অনেক মাছের ঘের। এতে দাম বেড়েছে চাষের মাছের। আর নদীর মাছের দাম তো আগে থেকেই চড়া। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হরিপদ বলেন, গত আগস্টের বন্যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছের ঘেরগুলো ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খামারিরা। এতে সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে চাষের মাছের।
আরেক মাছ ব্যবসায়ী বাদশা ব্যাপারী বলেন, অনেক নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কমে গেছে নদীর মাছের সরবরাহ। খাল-বিলগুলোতেও এখন তেমন একটা মাছ মিলছে না। এতে দেশি মাছের দাম আগে থেকেই বাড়তি।
বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
আর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি হারে ২২০০-২৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৮০০। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিতে ১৫০০-১৬০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য কেজিতে গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে ইলিশ রফতানি ও সামনের মাসে ইলিশ ধরা বন্ধকে কেন্দ্র করে মজুত শুরু করেছেন আড়তদাররা। এজন্য দাম কমছে না ইলিশের। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন, অনেকেই এখন ইলিশ মজুত করা শুরু করেছেন। সামনে দুর্গাপূজা, আর আগামী মাস থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে ২২ দিনের জন্য। মাছটি মজুতের প্রবণতা শুরু হওয়ায় বাজারে কমছে এর সরবরাহ; ফলে দাম বাড়ছে।