পত্নীতলায় মন্দিরে মন্দিরে ইউএনও’র পরিদর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক, পত্নীতলা : শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, আর দিগন্তে জুড়ে কাশফুলের মেলা জানান দিচ্ছে দুয়ারে কড়া নারছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই ধর্মের মানুষের কাছে দেবী দুর্গা শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক। হিন্দু শাস্ত্রমতে প্রতিবছর অসুরের বিনাশ করতেই মা দেবী দুর্গা ধরাধামে আবিভূত হন।
সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার দূর করতেই এ পূজার আয়োজন। দিন যতই এগিয়ে আসছে মণ্ডপগুলিতে শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে ততই মূর্ত হয়ে উঠেছে দেবীর রুপ। কোন কোন মণ্ডপে শিল্পীদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় চলছে মাটির কাজ।
আবার কোথাও কোথাও প্রতিমাগুলো রঙিন করার কাজে ব্যস্ত মালাকররা। তুলির আঁচড়ে সুন্দর করে তোলা হচ্ছে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক ও মহিষাসুর, লক্ষী,স্বরস্বতি ও তাদের বাহনের প্রতিমা। পদ্ম ও শিউলি লাবণ্য ছড়িয়েছে, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) মহা ষষ্ঠী পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু শারদীয় দুর্গাপূজা এবং সপ্তমী, অষ্টমী ও নববমী শেষে রবিবার( ১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে এ উৎসবের।
এদিকে হিন্দু পল্লী গুলোতে সাজ সজ্জায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে, ঘর বাড়ী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বিভিন্ন আলপনার ছাঁপ ও নতুন কাপড় কেনাকাটা। দেবীকে বরণ করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে পত্নীতলার স্থায়ী-অস্থায়ী মণ্ডপগুলোতে। ঢাকের তালে আরতি আর উলুধ্বনিত মুখরিত মণ্ডপগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় মোট ৮২টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবে। সদরে নজিপুর পৌরসভায় ১৭ টি। ১ নং পত্নীতলা ইউনিয়নে০৯ টি। ০৩ নং দিবর ইউনিয়নে ০৫ টি। ০৪ নং আকবরপুর ইউনিয়নে ০৩ টি।০৫ নং মাটিন্দর ইউনিয়ন ০৫ টি। ০৬ নং কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ০৪ টি। ০৭ নং পাটিচড়া ইউনিয়ন ০৮ টি। ০৮ নং নজিপুর ইউনিয়ন ১৪ টি। ০৯ নং ঘোষনগর ইউনিয়ন ০৫ টি। ১০ নং আমাইড় ইউনিয়ন ১২ টি সর্বমোট ৮২ টি।
উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় বাসুদেব মন্দির, ছোট চাঁদপুর, ঠুকনি পাড়ার মোড়, পালশা, পুঁইয়া সহ কয়েকটি মন্ডপে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন মালাকররা (কারিগর) মাটির কাজ শেষ করে তুলির আঁচড়ে রঙ এর প্রলেপে ফুটিয়ে তুলছে দেবীর রুপ।
পালশা মন্দিরে কর্মরত মালাকর দিলিপ কুমারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিনি প্রতিমা তৈরীর কাজ স্বপ্নে শিখেছেন দুবছর ধরে তিনি এ কাজ করছেন এবার তিনি ৩ টি প্রতিমার কাজ ধরেছেন তবে এবার মজুরি কম। এই প্রতিমার জন্য ২৫ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পত্নীতলা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গৌতম চন্দ্র দে বলেন প্রতিটি মন্দিরে ৫শ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। প্রতি মন্দিরে ১০ হাজর টাকা দেওয়ার কথা তবে উপজেলার কোন মন্দির এখনো এ টাকা পায়নি।
পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহ এনায়েতুর রহমান বলেন, দূর্গা পুজা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উপজেলায় ৮২ মন্দিরকে জনসমাগম বা দুরবর্তী বিবেচনায় তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ২৮টি, গুরুত্বপূর্ণ ২৩টি এবং সাধারণ ৩১ টি।
প্রতিটি বিটে একজন বিট অফিসার থাকবে, মন্দিরে মন্দিরে আনসার ভিডিপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন থাকবে টহল পুলিশ এবং সেনাবাহীনির টহল থাকবে। এছাড়া মন্দিরে মন্দিরে নিজস্ব সেচ্ছাসেবক টিম থাকবে, আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পুজা উদযাপন হবে। এখন পর্যন্ত কোন প্রতিমা ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা পপি খাতুন বলেন, পূজা উদযাপন বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল আছে, নিয়মিত বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করা হচ্ছে, কেউ কোন বিশৃঙ্খলা করলে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপন হবে।