অভাব ঘোচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ শরীফ এখন পরিবারের বোঝা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৪; সময়: ১২:৩০ pm | 
খবর > আঞ্চলিক

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সংসারের হাল ধরতে মাদরাসার লেখাপড়া ছেড়ে মাত্র ১৭ বছর বয়সে রিকশার হাতল ধরেছিলেন শরিফ। যে হাত দিয়ে উপার্জন করে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফেরানোর কথা, সেই হাত এখন অচল।

৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন উৎসব মিছিলে রাবার বুলেট শরীফের হাতে বিদ্ধ হলে ধূলিসাৎ হয়ে যায় পরিবারের হাল ধরার স্বপ্ন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় উল্টো পরিবারের বোঝা হয়েছে লালমনিরহাটের এ কিশোর।

শরীফের পুরো নাম মো. শরীফ উদ্দিন। পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের সানিয়াজান নদীর তীরে অবস্থিত সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা। ওই বাড়িতে মা আনোয়ারা বেগমকে নিয়ে থাকে সে। সেখানে ডান হাতে গুলি আর বাম পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় বিছানায় দিন কাটছে তার।

সেখানে কথা হয় শরীফের সঙ্গে। তার চেহারা থেকে কৈশোরের দূরন্তপনা ম্লান হয়েছে; সেখানে এখন ভর করেছে একরাশ আতঙ্ক। জরাজীর্ণ বিছানার একপাশে বালিশে বাঁ পা তুলে শুয়ে ছিল; তার অর্ধেকটাই ব্যান্ডেজে মোড়ানো।

কী হয়েছিল প্রশ্ন করতেই উৎকণ্ঠায় শরীফ বলে, জীবিকার তাগিদে মাদরাসা ছেড়ে তার বড় ভাই হামজার সঙ্গে কুমিল্লা শহরে রিকশা চালাত। সংসারের হাল ধরতে সে এ পথ বেছে নিয়েছিল। সবকিছুই ঠিকঠাকও চলছিল। এরই মধ্যে ৫ অগাস্ট বৈষম্যবিরোধী উৎসব মিছিলে সন্ত্রাসীদের ছোড়া একটি রাবার বুলেট তার ডান হাতে বিদ্ধ হয়। তখন সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে চলে যায়।

রডের আঘাতে তার হাত, পিঠ, মাথা থেঁতলে গেছে এবং বাম পায়ের হাঁড় ফেটে গেছে। আর সেখানেই তাকে চিকিৎসক ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছে বলে জানায় শরীফ।

শরীফরা দুই ভাই, এক বোন। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ভাই আমির হামজাও রিকশা চালায় কুমিল্লায়। এখন হামজার রোজগারের টাকা দিয়েই চলছে আনোয়ারা বেগমের সংসার। কিন্ত এই সামান্য রোজগার দিয়ে সংসার চালাবেন, না ছেলের চিকিৎসা করাবেন- সে ভাবনাতেই চোখে অন্ধকার দেখছেন এই গৃহিণী।

যে ছেলের ছুটে বেড়ানোর সময়, তাকে বিছানায় শুয়ে কাতড়াতে দেখে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে আনায়ারার। ছেলেকে নিয়ে সামনের অনিশ্চিত জীবন কিভাবে পাড়ি দেবেন, সে কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে এ মায়ের।

আনোয়ারা বলছিলেন, “কুমিল্লার একটি হাসপাতালে শরীফের পা চিকিৎসকরা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন। কিন্ত তারা তার হাতের বুলেট বের করতে পারেনি। ওই অবস্থাতেই তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। বাড়িতেই তার চিকিৎসা করা হচ্ছে।”

চিকিৎসা এগোলো না কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হাতে যেটুকু টাকা জমা ছিল, তা চিকিৎসার ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে গেছে। এখন বিনা চিকিৎসায় বাড়ির বিছানায় পড়ে রয়েছে। হাতের গুলি বের করতে অপারেশনের জন্য যে টাকা লাগবে সে টাকা কোথায় পাব? সেই দুশ্চিন্তায় হতাশ আমি।”

বাউরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন হোসেন সরকার বলেন, “শরীফের এ অবস্থায় তার পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ মুহূর্তে তাদের সহায়তার খুবই প্রয়োজন। পরিবারটির দিকে নজর দিতে সরকার ও বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি কামনা করছি।”

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন